হাতিরঝিলে জমছে মুখর আড্ডা
শিল্প-সংস্কৃতির সংগে জড়িত মানুষেরা জল-হাওয়া-আকাশ ভালোবাসেন। আরও ভালোবাসেন আড্ডা। কিন্তু শহর ঢাকায় আড্ডা দেয়ার মতো পরিবেশ আর কই? একসময় শাহবাগের ছবির হাটে আড্ডা জমত। জাদুঘরের সামনের রাস্তা এখন মেট্রোরেলের দখলে। আজিজের বদ্ধ ঘরে আকাশ দেখা যায় না। বিউটি বোর্ডিং যেতে হলে জ্যামেই বেলা শেষ। তাহলে কি আড্ডা আটকে থাকবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মেই? এই নিয়ে মনখারাপের হাওয়া বইছে শিল্পাঙ্গনে। এমন সময় মনভালো করা এক খবর এলো। রাজধানীর হাতিরঝিলে চলচ্চিত্র ও শিল্পপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে চালু হয়েছে এক নান্দনিক রেস্টুরেন্ট। নাম তার 'ঝিল কুটুম'। চলচ্চিত্রকর্মী ও তরুণ উদ্যোক্তা আনন্দ কুটুমের এই স্বপ্নের রেস্টুরেন্টটি হয়ে উঠেছে শিল্পের সকল শাখার মানুষের মুক্তআড্ডার নান্দনিক স্থান।
হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজার অদূরেই 'ঝিল কুটুম'-এর অবস্থান। রেস্টুরেন্টের পা ছুয়ে চুমু খাচ্ছে ঝিলের শান্ত জল। জানালা দিয়ে তাকালে ঝিলের নান্দনিক দৃশ্য মনভালো করে দেবে। সন্ধ্যার গোধূলি আলোয় এক অপার্থিব মায়া যেন 'ঝিল কুটুম'কে ঘিরে ধরে। শান্ত, সুন্দর, নিরিবিলি 'ঝিল কুটুম' আর ঝিলের শান্ত জলে ছায়া ফেলে মুক্ত আকাশ।
আনন্দ কুটুম বলেন, গত ১৫ মার্চ রেস্টুরেন্টের গ্রান্ড ওপেনিং হয়। পাঁচ দিন পর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সেচ্ছায় লকডাউন করে দেই। ঈদুল আজহার দিনে (১ আগস্ট) স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেস্টুরেন্ট আবার চালু হয়েছে।
দিন যতই যাচ্ছে ততোই এখানে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। লেখক ও পরিচালক মোস্তফা মনন, চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল, অভিনেতা রওনক হাসান, অভিনেত্রী জয়িতা মহলানবিশ, সিনেমাটোগ্রাফার সাহিল রনি, নাট্য পরিচালক সেতু আরিফ, খায়রুল পাপন, মানস মেহেদী, ম্যাক সাব্বির, চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী, সমালোচক ও চলচ্চিত্রকর্মীসহ প্রমুখের পদচারণায় ঝিলকুটুম ইতোমধ্যে মুখর হয়ে উঠেছে।
লেখক ও পরিচালক মোস্তফা মনন বলেন, ঝিলের জলের কোল ঘেঁষেই ঝিল কুটুমের চেয়ার। বাঁশের মাচা আছে রেস্টুরেন্টের সাথেই। সেখানে বসে ঝিলের জলে নিজের ছায়া দেখতে দেখতে বাতাসের গান শোনা যায়। ঝিল কুটুমে গেলে এই মাচানের দিকে তাকাতে ভুলবেন না। দেখবেন হয়ত আপনার প্রিয় কোনো তারকা ধ্যানমগ্ন হয়ে এখানেই বসে আছেন। কিংবা জমে উঠেছে একদল শিল্পস্রষ্টার তুমুল তর্কমুখর আড্ডা। চাইলে আপনিও সে আড্ডায় যোগ দিতে পারেন। আর হৃদ্ধ করতে পারেন হৃদয়।
ঝিল কুটুমে আছে মুভি স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ, ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন, ফিল্ম ক্যাফে ও ফিল্ম পোস্টার হাব। আর আগামী মাস থেকে চালু হচ্ছে 'ওপেন ফিশ বারবিকিউ'।
আনন্দ কুটুম বলেন, ঝিল কুটুম নিছক রেস্টুরেন্ট নয়। এটি শিল্পপ্রেমী প্রতিটি মানুষের আড্ডা প্লেস। এখানেই মিলিত হবে পুরাতনের সাথে নতুন। তাত্ত্বিক আড্ডা হবে। চলচ্চিত্র নিয়ে তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, হবে প্রেম। আর এখানেই জন্ম নেবে মাস্টার পিস সব আর্টের আইডিয়া।
শিল্প-সংস্কৃতির মানুষের কথা মাথায়ই রেখে তৈরি হয়েছে রেস্টুরেন্ট কাম আড্ডাস্থান ঝিল কুটুম। তবে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত বলেও জানান কুটুম।