জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে কোটি টাকার অনিয়ম
মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক নিয়োগেই আড়াই কোটি টাকার বেশি অনিয়ম হলেও মানছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিতে তৈরি হয়েছে জাল দলিল।
মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক নিয়োগেই ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে তৈরি হয়েছে জাল দলিল। দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানও সরাসরি নেই কাজ বাস্তবায়নে। ভেটিং পরামর্শ উপেক্ষা করেই বাড়ানো হয়েছে নির্মাণ ব্যায়। আর মাস্টারপ্ল্যানের ঠিকাদারির দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও আগে থেকেই আছে মানহীন কাজের অভিযোগ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরো কাজে এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম হয়নি।
শিক্ষার্থী সংখ্যায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর গাজীপুরের মূল ক্যাম্পাসে চলছে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ। তৈরি হচ্ছে সিনেট ভবন, আইসিটি ভবন, ডরমেটরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন। এই নির্মাণ কাজের গোড়াতেই অর্থাৎ পরামর্শক নিয়োগেই অনিয়মের শুরু।
পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৮৭ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকার আর্থিক প্রস্তাব দেয় দেয় ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট- ডিডিসি। তাদের চেয়ে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কমে প্রস্তাব দেয় শহিদুল্লাহ অ্যান্ড এসোসিয়েটস। তবে, অর্থকমিটির কার্যবিরণীতে দেখা যায়, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির ৯ই আগস্ট ২৩০তম সভায় সর্বনিন্ম দরদাতাকে কাজ না দিয়ে আরো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। তার পরের সভায় পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি আর উপস্থাপন হয়নি।
অথচ টেন্ডার মুল্যায়ন কমিটির ২৩০তম সভারই আরেকটি দলিল তৈরি করে দেখানো হয়েছে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিডিসিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আর এতে সম্মতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুনুর রশিদ। আর দরপত্র মুল্যায়ন পদ্ধতিও অস্পষ্ট। মুল্যায়নের শুরু থেকেই ডিডিসিকে সামনে রাখা হলেও মূলত কাজ বাস্তাবায়ন করছে মার্ক আর্কিটেক্সার। দাবি করা হচ্ছে ডিডিসি জয়েন্ট ভেন্চার করেছে করেছ মার্ক আর্কিটেক্সারের সাথে।
দরকার না থাকলেও অতিরিক্ত নকশা করে নির্মাণ কাজের খরচ বাড়ানো হয়েছে । মাস্টার প্ল্যানের ভেটিং এর সাথে যুক্ত বুয়েটের একজন অধ্যাপক অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছিলেন। খোদ প্রকৌশল দপ্তারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপচয় হচ্ছে কম করে ১০ কোটি টাকা। তবে অপচয়ের অভিযোগ মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো: মশিউর রহমান বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই আমাদের নির্দেশনা মতেই যাতে কাজ হয়। তবে এতে আমাদের কোন খরচ বাড়ছে না। আর আমাদের যাদের আগে থেকে ভেটিং করা হয়েছিল সেই ভেটিং এর বাইরে আমরা যাবো না।
এখানেই শেষ নয়, নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি পেয়েছে মজিদ অ্যান্ড সন্স নামের প্রতিষ্ঠান। বহুল আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এখনো কারাবন্দী। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণে গুণগত মান নিয়েও সংশয় শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য ড. মো: মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যাদেরকে প্রকল্প কাজ দিয়েছে তাদের প্রথম দিন থেকেই বলে দেয়া হয়েছে এই কাজের কোয়ালিটির সঙ্গে আমরা কোন আপোষ করবো না। আমাদের সুপারভাইশন কমিটি প্রত্যেকটি জায়গায় গিয়ে কাজ প্রত্যক্ষ করছে।
নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের বরাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলছেন, ২৫০ কোটি টাকার এই নির্মাণ কাজ ১০০ কোটি টাকাতেই করা সম্ভব ছিলো।