ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:০১

স্টেক তৈরির গোপন সূত্র

অনলাইন ডেস্ক
স্টেক তৈরির গোপন সূত্র

আমাদের দেশে মাংস খাওয়ার যে রীতি, তাতে মাংসের প্রকৃত স্বাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তেলে, ঝোলে, আদা-রসুন-পেঁয়াজের ঝাঁজ আর গরম মসলার খুশবাইতে মাংসের আসল স্বাদই তো হারিয়ে যায়। মাংসের সত্যিকারের স্বাদ পেতে হলে চেখে দেখতে হবে গরমাগরম স্টেক। তাই জানতে হবে ভালো স্টেক বানানোর প্রক্রিয়া।

আমাদের স্টেকের প্রতি একটা বিশেষ ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। বাসায় কিন্তু বেশ ভালো, প্রায় পেশাদারি স্টেক ওয়ালাদের মতো স্টেক বানানো খুব একটা কঠিন নয়। কয়েকটা বিষয় মনে রাখলেই এমন স্টেক বানানো যায় যে সবাই ট্যারা হয়ে যাবে। বাসায় আসলে এর থেকে বেশি কিছু করার নেই, যা দেখাচ্ছি তাই কাফি।

ভিন্ন ধরনের ঝলসানো মাংসের মধ্যে একটা বিশেষ ধরণ, যাকে আমরা স্টেক বলি, সেটা নিয়ে আলাপ করি একটু। কারণ কাবাব জাতীয় ঝলসানো মাংস তো আমরা ভালোই চিনি, তবে স্টেক জিনিসটা আমাদের এখানে অপেক্ষাকৃত নতুন আমদানি।

প্রথমে স্টেক তৈরির আগে বুঝে নিতে হবে কেমন স্টেকটা চাই। কারণ, একেক অংশের মাংস দিয়ে একেক রকম স্টেক তৈরি হয়। শুধু তা-ই নয়, মাংসটা কোন জায়গা থেকে এসেছে, সেটাও স্টেকের বেলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু মাংসই নয়, জ্বালানিও বিশাল একটা ভূমিকা রাখে স্টেককে সুস্বাদু করে তুলতে। খোলা তাওয়ায় রান্না করা হচ্ছে, নাকি কাঠের আগুনের ঢাকা দেওয়া চুল্লিতে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ বিশেষ কাঠের সুঘ্রাণ মিশে যায় মাংসেও। ওক, ম্যাপল, সেডার, মেসকিট নানান কাঠের ধোঁয়া মাংসের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাকে করে তোলে আরও সুস্বাদু।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবশ্য এভাবে স্টেক বানানোটা বেশ ঝক্কিরই। বিকল্প উপায়েও ভালো স্টেক বানানো যায় । ভালো স্টেক তৈরির গোপন রহস্য জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই গুহামানবের যুগে। শিকার করা টাটকা মাংসের ফালি, আগুনে পুড়িয়ে সামান্য লবণ আর গোলমরিচ ছড়িয়ে খেয়ে ফেলা, স্টেকের সৌন্দর্যই হচ্ছে খাবারটির সহজিয়া বৈশিষ্ট্য।

যেভাবে তৈরি করবেন স্টেক: টাটকা মাংস নিন। তাতে হালকা একটু তেল হাতে চেপে দুপাশে মাখান। ভালো করে গরম করা প্যানে মাংসের টুকরাটি ছেড়ে দিন। হাতে একটু চেপে ধরে রাখুন, মিনিট তিনেক পর উল্টে দিন এবং অন্য পাশটাও ভাজুন। মিনিট তিনেক পর নামিয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ রেখে দিন। কারণ, গরম অবস্থায় কাটলে ভেতর থেকে রস সব গড়িয়ে বের হয়ে যাবে।’ বাংলাদেশের বাসাবাড়িতে গ্যাস ওভেন ব্যবহারের খুব একটা চল নেই, আছে মাইক্রোওয়েভ। কিন্তু স্টেক তৈরিতে মাইক্রোওয়েভ ভুলেও ব্যবহার করো যাবে না।’

দুর্দান্ত সব স্টেক বানানোর কিছু সূত্র: ভালো স্টেকের জন্য ম্যারিনেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। টাটকা গোলমরিচের গুঁড়া, লবণ হচ্ছে একদম মৌলিক ম্যারিনেটর। কেউ চাইলে চৈনিক বা প্যান এশিয়ান ফ্লেভার যোগ করতে পারেন। সে জন্য লাল মরিচ বাটা আর আদা বাটায় মাংসটা মাখিয়ে রাখতে পারেন। তারপর গ্রিলারে সেঁকে নিন বা করতে পারেন প্যান ফ্রায়েড।

একদম ক্লাসিক ইউরোপিয়ান ঘরানায় করতে চাইলে মাংসে স্রেফ নুন আর গোলমরিচ ব্যবহার করুন। চাইলে খানিকটা থাইম আর রোজমেরি। নামানোর পর গরম মাংসের ওপর একটু মাখন ছড়িয়ে দিন। একফালি মাংস ভাজা, কোনো একটা সস, সঙ্গে খানিকটা ম্যাশড/বেইকড/ফ্রায়েড পটেটো আর বয়েলড/স্টার ফ্রায়েড ভেজিটেবল, এই হচ্ছে পরিপূর্ণ স্টেক মিল।

আপনারা সস হিসেবে বারবিকিউ সস কিংবা হল্যান্ডাইজ সস পরিবেশন করার আগে স্টেকের সঙ্গে দিতে পারেন। চাইলে গার্লিক মাশরুম সসও বানাতে পারেন। ম্যাশড পটেটোতে হালকা লেমন জেস্ট মিশিয়ে দিন, তাতে সতেজ একটা সুরভি আসবে। চাইলে পারমেজানো চিজ মেশাতে পারেন।

 

সবজি হিসেবে গাজর আর মটরশুঁটি রাখতে পারেন, মাখনে ভাজা গাজর ও মটরশুঁটি খুব ভালো লাগবে স্টেকের সঙ্গে খেতে। কেউ চাইলে ব্রকলি আর মাশরুমও রাখতে পারেন। অনেকেরই পছন্দ পালংশাক। তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, কোনো উপাদানই যেন খুব তীব্র স্বাদের না হয়। তাহলে মাংসটা ম্যাড়ম্যাড়ে লাগবে।

মূল্যবান একটা পরামর্শ: মাংস কোন জায়গা থেকে কীভাবে কাটা হচ্ছে, স্টেক বানাবার জন্য সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তা-ই নয়, মাংস সংরক্ষণটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে চর্বি। সবাই আজকাল রেডমিট এবং চর্বি নিয়ে খুব ভয়ে থাকে। কিন্তু চর্বিটা না থাকলে তো মাংসের সৌরভ আসবে না।

প্রথমবারেই যে কেউ দুর্দান্ত স্টেক বানিয়ে ফেলবেন, এমনটা কদাচিৎ হবে। বানাতে বানাতেই বুঝে যাবেন কোন মাংস কতটুকু সময় ভাজতে হবে।

 

উপরে