শিশুকে শৃঙ্খলা শেখাবেন যেভাবে
সন্তানকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে শৃঙ্খলা শেখানোর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে শৃঙ্খলা মানেই কিন্তু শুধু কড়া ধমক বা শাস্তি নয়। এতে হতে পারে হিতে বিপরীত। সন্তানকে শৃঙ্খলা শেখাতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন। ভেরি ওয়েল ফ্যামিলির পক্ষ থেকে রইল কিছু পরামর্শ।
১। মনে রাখবেন, শিশুরা সব সময় মা-বাবাকেই বেশি অনুকরণ করে। নিজেকে তাই সন্তানের রোল মডেল করে তুলুন। আপনি সন্তানের জন্য যা নিয়ম করবেন, নিজেও তা মেনে চলুন। আপনি যদি সময়ে-অসময়ে টিভি চালিয়ে রাখেন কিংবা ফোনে গল্প করেন বা ইন্টারনেট চালান, তাহলে আপনার সন্তানও নিয়ম মেনে পড়তে বসবে না। সময়ের কাজ সময়ে করুন, সন্তান আপনাকে দেখেই শিখবে।
২। সন্তানকে শাসন করার সময় বাবা-মা দুজনই একটা ইউনিট হিসেবে কাজ করুন। একজন শাসন করলেন আর একজন আদর করলেন, এমন করলে চলবে না। শিশুকে বোঝান ভুলটা ভুলই। সন্তান যেন বুঝতে পারে অন্যায় করলে মা ও বাবা দুজনেই রাগ করেন।
৩। সন্তান যতই ছোট হোক না কেন, ওকে সম্মান করুন। ওর মতামতের গুরুত্ব দিন। ওর মতামত যদি মানার মতো না হয়, তাহলে ওকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন কেন তা মানা সম্ভব নয়।
৪। সন্তানকে শাসন করার সময় কোনো মন্দ বাক্য প্রয়োগ করবেন না। বা অনেকে গালাগালি করেন, সেটা একেবারেই করা যাবে না।
৫। অন্য কারো সঙ্গে সন্তানের তুলনা করে তাকে শোধরাতে বলবেন না। এতে ওর আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।
৬। নেতিবাচকভাবে না বলে ইতিবাচকভাবে বলুন। যেমন 'তোমার মাথায় একেবারেই বুদ্ধি নেই' এমনটা না বলে বলতে পারেন, 'এটা কি একটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ হয়েছে?'
৭। কখনই শৃঙ্খলা চাপিয়ে দেবেন না। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওর পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিন।
৮। একেকজন শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তাই আপনার শিশু কীভাবে সময় কাটাতে ভালোবাসে, কোন সময়ে পড়তে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, এগুলো মাথায় রেখে তবেই রুটিন বেঁধে দিন। স্কুল থেকে ফিরেই আবার পড়ার টেবিলে বসার জন্য চাপ দেবেন না। কিছুটা সময় ওকে খেলতে দিন। ছবি আঁকা কিংবা ওর শখের কাজে ওকে উৎসাহ দিন।
৯। কোনো অন্যায় করলে প্রথমে বুঝিয়ে বলুন। তারপর সাবধান করুন। আবার একই কাজ করলে কিছুদিনের জন্য ওর পছন্দের কোনো জিনিস দেওয়া বন্ধ করে দিন কিংবা ওর সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দিন। কিন্তু গায়ে হাত তোলা একেবারেই উচিত নয়।
১০। সবার সামনে সন্তানের সমালোচনা বা নিন্দা করবেন না। এতে ওর আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
১১। সন্তান যদি নিয়ম মেনে চলে, তাহলে মাঝেমধ্যে ওকে ছোট উপহার দিন। ও যেন বুঝতে পারে ওর আচরণে আপনারা খুশি হচ্ছেন।
সন্তানকে সময় দিন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে প্রতিদিন কিছুটা সময় কাটান। নিজেদের ছোটবেলার গল্প ওর সঙ্গে করুন। সব সময় মনে রাখবেন, সন্তান ছোট বয়সে এক-আধটু দুষ্টুমি করবেই। খেয়াল রাখবেন আপনার শৃঙ্খলার চাপ যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। কারণ তাতে ওর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে। মাঝেমধ্যে রুটিন ভাঙার মজাটাও ওকে উপভোগ করতে দিন।