ব্যাথামুক্ত যৌনমিলনের জন্য
যৌনমিলন একটি শারিরীক এবং মানসিক আনন্দ বা পরিতৃপ্তির বিষয়। নর-নারী উভয়ই এই আনন্দ উপভোগ করার অধিকার রাখে। যৌনমিলনের সময় ব্যাথা অনুভব করা নতুন কিছু নয়। আগের দিনের মানুষজন এমনকি বর্তমান যুগের অসচেতন মানুষেরা এই ব্যাথাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেন। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিজ্ঞান যৌনমিলনের সময় তীব্র ব্যাথা অনুভব হওয়াকে চরম অস্বাভাবিক বলে ঘোষণা করেছে। চিকিৎসাবিষয়ক একটি জরীপে জানা গেছে ৭৫ শতাংশ নারী যৌনমিলনের সময় তীব্র ব্যাথা অনুভব করেন। নারীদেরও যৌন অনুভুতি আছে যা পুরুষের তুলনায় কয়েকগুন বেশী। যেহেতু যৌন অনুভুতি আছে সেহেতু যৌনমিলন উপভোগ করার অধিকারও তার আছে। তাই আসুন দেখে নেই ব্যাথামুক্ত যৌনমিলনের জন্য কিছু টিপস।
১. সঙ্গীনীর চাহিদা জেনে নিন : যৌনমিলনের সময় পুরুষের কর্তৃত্ব কিংবা নারীসঙ্গীর চাহিদা, তার মানসিক এবং শারিরীক অবস্থা না বুঝে নিজের ইচ্ছেমত সেক্স চালিয়ে যাওয়া এর অন্যতম প্রধান কারন। আপনার সঙ্গীনী যৌনমিলনে আগ্রহী কিনা সেটা জেনে নেয়া উচিৎ। তার কোন শারীরিক সমস্যা আছে কিনা সেটা জেনে নিয়ে তারপর সঙ্গম করুন।
২. বীরত্ব দেখাতে যাবেন না: মনে রাখবেন যোনী নারীদেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ। পুরুষাঙ্গের আকৃতির তুলনায় যোনীপথ ছোট হওয়ায় যৌনমিলন নারীদের জন্য খুব কষ্টদায়ক হয়। কোন নারী এই কষ্টদায়ক অনুভুতি প্রকাশ করলে আপনি যদি সেটা যৌনসুখ বলে ধরে নেন তবে তা হবে ভীষণ ভুল। কাউকে যন্ত্রণা দিয়ে নিজে আনন্দ উপভোগ করাটা মানুষের কাজ নয়। তাই সঙ্গীনীর মতামত নিয়ে ধীরেসুস্থে প্রবেশ করান।
৩. যোনীতে সংক্রমণ : অনেক সময় যোনীর চারপাশে সংক্রমণ দেখা দেয় যা বেদনাদায়ক হয়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ডিউক এর কারণ হিসেবে সস্তা সাবান, ম্যাসেজ অয়েল, টয়লেট টিস্যু, বডি ওয়াশ ইত্যাদিকে দায়ী করেন। এ ধরনের কোন প্রসাধনী আপনার যোনীতে অস্বস্তিকর অনুভুতির সৃষ্টি করে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা বর্জন করুন।
৪. ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ : অপরিচ্ছন্ন থাকলে কিংবা অন্য যে কোন অসুস্থতার কারনে নারীদের যৌনাঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। ড. ডিউক এর জন্য ভাল ব্র্যান্ডের কোন এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনাল ওয়াশ ব্যাবহারের পরামর্শ দেন। যোনীপথ সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরী।
৫. যোনিপথ ছোট হয়ে যাওয়া : যোনিপথ সংকুচিত হয়ে যাওয়া একটা রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ভ্যাজিনিসমাস’। ল্যাংগোর মেডিক্যাল সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ র্যাকুয়েল ড্যাড্রিক ভ্যাজিনিমাসের কারন হিসেবে অতীত কোন যৌনতাবিষয়ক কষ্টদায়ক স্মৃতি কিংবা ধর্ষণের ফলে যৌনতাভীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি সবচে যে বিষয়টার উপর গুরুত্ব দেন তা হলো নিয়মিত সঙ্গীর সাথে সঙ্গমে ব্যাথা পেলে নারীদের একটা মানসিক ভীতি তৈরি হয়। এর ফলে তাদের সঙ্গমের ইচ্ছা কমে যায় এবং যোনিপথও সংকুচিত হয়ে যায়।
৬. যোনীপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়া : মেয়েদের যৌনউত্তেজনা হলে তাদের যোনীপথে একধরনের তরল পদার্থের আগমন ঘটে। যা যোনীপথকে পিচ্ছিল করে এবং পুরুষাঙ্গ প্রবেশে সহায়তা করে। কিন্তু এটা না ঘটলে বুঝতে হবে যে আপনি রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য সংকোচ না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এই রোগের চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা চলাকালীন যৌনমিলন করতে চাইলে সঙ্গীকে বলুন জেল ব্যাবহার করতে। যা সারাদেশে খুবই সহজলভ্য।
৭. জরায়ুতে আঘাত : জরায়ু যোনীপথের সোজাসুজি অবস্থান করে। তাই যৌনমিলনের সময় জরায়ুতে পুরুষাঙ্গের আঘাত লাগলে তা প্রচন্ড বেদনাদায়ক হয়। এরকম কিছু হলে সঙ্গীকে বলুন। বিশেষজ্ঞদের মতে যৌনআনন্দের জন্য পুরুষাঙ্গ পুরোপুরি প্রবেশ করানোটা জরুরী নয়।
৮. পেরিনিয়াম এরিয়ায় ব্যাথা : নারীদের যোনি থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত এলাকাকে পেরিনিয়াম এরিয়া বলা হয়। এই স্থানটুকু স্বাভাবিকভাবেই খুবই স্পর্শকাতর। পেরিনিয়াম এরিয়ায় ব্যাথা অনুভব করলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এর জন্য ডাক্তাররা যোনী এবং মলদ্বারের মধ্যবর্তী স্থানটুকুতে কিছু ম্যাসেজ করার পরামর্শও দিয়ে থাকেন। নার্ভে সমস্যা হলে সার্জারি করার প্রয়োজনও হতে পারে।
৯. নিয়মিত যৌনমিলন না করা : নিয়মিত যৌনমিলন না করলে যোনিপথ সংকুচিত হয়ে ব্যাথার অনুভুতি দিতে পারে। তাই সঙ্গমের অভিজ্ঞতা থাকলে তা নিয়মিত করাই শ্রেয়।
১০. অতিরিক্ত যৌনমিলন : প্রতিদিন একাধিকবার যৌনমিলন করলে যৌনাঙ্গের নার্ভগুলি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই আনন্দের অনুভূতি না হয়ে ব্যাথা অনুভব হয়। দিনে একাধিকবার সেক্স করার জন্য আপনি মানসিক ও শারিরীকভাবে প্রস্তুত কিনা সেটা বিবেচনা করে নিন। পুরুষদেরও এক্ষেত্রে সঙ্গীনির মতামতকে গুরুত্ব দেয়া এবং তার প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরী।