গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু: জাতিসংঘ
গাজা যুদ্ধে নিহতদের যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতির ধারাবাহিক লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।
গাজায় শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রথম সাত মাসে মৃতের সংখ্যার হিসাব গণনা করে গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘ জানায়, সাত মাসের মধ্যে নিহত ৮ হাজার ১১৯ জনকে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। যা পুরো ১৩ মাসের সংঘর্ষের জন্য প্যালেস্টাইন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দাবি করা ৪৩ হাজারেরও বেশি নিহতের সংখ্যার তুলনায় কম।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তুর্ক বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়া চালানো হয় এবং এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সব তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা উচিত।
তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা গাজায় বেসামরিকদের ক্ষতি এড়ানোর জন্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে। তারা দাবি করেছে, একজন বেসামরিকের মৃত্যুর বিনিময়ে একজন যোদ্ধা মারা যাচ্ছে। বেসামরিক স্থাপনাগুলো হামাস ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে তারা। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে কনিষ্ঠ নিহত হিসেবে এক দিন বয়সি একটি শিশুর মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে এবং সবচেয়ে বৃদ্ধ নিহত ব্যক্তি ছিলেন ৯৭ বছর বয়সি এক নারী। নিহতদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই শিশু এবং ৫-৯ বছর বয়সি শিশুদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১০-১৪ বছর বয়সি এবং ৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের সংখ্যাও কম নয়।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জের ধরে গাজা যুদ্ধ শুরুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। বছর শেষে সেই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আর যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মতো টানেল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ প্রায় দশ হাজারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসরায়েলকে।
উল্লেখ্য, গাজায় ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২ হাজার ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। একই দিন হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ অপহৃত হন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে অন্তত ৩ হাজার ১০৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও অন্তত ১৩ হাজার ৮৫৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।