আমেরিকায় মুসলিম ভোটারদের সমর্থন হারাচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের হাতে গোনা কয়েক দিন রয়েছে। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ই নভেম্বর তাদের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে ভোট দিবেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে, মুসলিম আমেরিকানরা এবারের নির্বাচনে কোন পক্ষ নেবেন?
ফিলিস্তিন যুদ্ধে বাইডেন-কামালা প্রশাসনের ভূমিকায় আমেরিকান মুসলমানরা হতাশ। চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। আর এতে সমর্থন দিচ্ছে অ্যামেরিকা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ মার্কিন মুসলিম ভোটাররা। গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতাকে সমর্থন করায় এবার ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন কমে যাচ্ছে।
নির্বাচনী জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ২৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার কামালা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যে ২০১৬ সালে ৬৫ শতাংশ হিলারি ক্লিনটনকে এবং ২০২০ সালে ৮০ শতাংশ জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। বারাক ওবামার ক্ষেত্রে এই অনুপাত ছিল ২০০৮ সালে ৮০ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৯২ শতাংশ। এই হিসাবে প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ মুসলিম ভোটার ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অ্যামেরিকার ইতিহাসে বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে মুসলিম ভোটাররা। তবে গত চার মেয়াদের শাসন আমল বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে, ডেমোক্র্যাটরাই মুসলিম বিশ্বে বেশি আগ্রাসন চালিয়েছে।
এক বিংশ শতাব্দিতে মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসন শুরু হয় ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার মধ্য দিয়ে। যার শুরুটা হয় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের হাত ধরে। এরপর ২০০৮ সালে বারাক হোছাইন ওবামা ক্ষমতায় আসার পর ধারণা করা হচ্ছিলো ইরাকসহ মুসলিম বিশ্বে অ্যামেরিকার আগ্রাসন কমে আসবে। তবে বাস্তবে ওবামা আসার পর পুরো মধ্যপ্রাচ্যে জুড়ে অস্থিরতা আরো বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে মার্কিন হস্তক্ষেপে শেষ হয় লিবিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ ও সফল শাসক গাদ্দাফির অধ্যায় । শুধু গাদ্দাফিরই পতন হয়নি, আরব ভূখণ্ড থেকে ধ্বংস হয়েছে লিবিয়ার মতো শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের। একই ভাবে ২০১৩ সালে অ্যামেরিকার সহায়তায় ক্ষমতাচ্যুত করা হয় মিশরের প্রেসিডেন্ট মুরসিকে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে সিরিয়া। জঙ্গী আইএস নাটক সাজিয়ে ২০১১ সালে থেকে সিরিয়ায় আগ্রাসন শুরু করে অ্যামেরিকা।
এরপর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ সালে মনোনয়ন পান ডনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচার থেকেই তিনি মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন।
তবে ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর ইরানের সঙ্গে নানা ভাবে দ্বন্দ্বে জড়ালেও যুদ্ধে যায়নি কখনোই। এমন কি ট্রাম্পের সময় মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসনও এক প্রকার বন্ধ ছিলো।
২০২০ সালে আবারো ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসেন। জো-বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর আরব দেশগুলোতে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। অ্যামেরিকার সহায়তায় ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরানসহ আরব দেশগুলোতে সরাসরি হামলা চালায় ইসরায়েল। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
ফিলিস্তিন ও লেবাননে হাজার হাজার মানুষকে হত্যায় প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। এই কারণে এই নির্বাচনে মুসলিমদের সমর্থন হারাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। যা উগ্রবাদী ট্রাম্পের জন্য খুবই ইতিবাচক।