ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:৪৮

এবার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আশঙ্কা
প্রতীকী ছবি

ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশ ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বারনিয়ার এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বেয়ারবক এরই মধ্যেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ার এক টুইটবার্তায় বলেন, নিকট ভবিষ্যতে যেকোনো সময়ে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা এবং পরিস্থিতি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। পৃথক এক পোস্টে অ্যানেলিনা বেয়ারবক বলেন, মঙ্গলবার রাতে যে হামলা ঘটল, তা মধ্যপ্রাচ্যকে অতল গহ্বরের দিকে নিয়ে যাবে।

গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে লেবাননে ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র ইসলাম রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। প্রথম পর্যায়ে কয়েক দিন ইসরায়েলের বিমান বাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, এতে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন। খবর এএফপির।

এই পর্বের শেষ পর্যায়ে লেবাননে হিজবুল্লাহর সদরদপ্তরে আঘাত হানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সে হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসারুল্লাহ। হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের স্থলবাহিনী।

স্থলবাহিনী অভিযান শুরুর পর ওই রাতেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি এক বার্তায় জানান, ‘ইরানের হামলার জবাব দেওয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে, ঠিক সময়ে সেটির বাস্তবায়ন করা হবে।’

এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গতকাল বুধবার সকালে হামলা চালিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি বলছে, তারা গতকাল সকালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পর পর কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ইসরায়েলি সামরিক ব্যারাকে রকেট হামলা।

হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ আরও বলেছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে শুৎলা ও মাসকাফ আম সেটেলমেন্টে এবং শোমেরা ব্যারাকে ইসরায়েলি সেনাদের একটি জমায়েতে তিনটি মিসাইল হামলা চালানো হয়। তারা যত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এর বেশ কয়েকটি সরাসরি ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে।

এই হামলা চালানোর কিছুক্ষণ আগেই লেবাননের আদাইসেহ শহর থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পিছু হটিয়ে দেওয়ার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর এসব দাবির বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

এদিকে, আইআরজিসির এক কর্মকর্তা ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সিকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে এই অপারেশন চালানো হয়েছে। জায়নবাদী গোষ্ঠী যদি ইরানের অপারেশনের প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের পরবর্তী হামলা আরও বিধ্বংসী হবে।’

এদিকে মিসাইল হামলার জবাবে ইরানে যেকোনো সময় হামলা চালাবে দখলদার ইসরায়েল। আর এই হামলার পরিধি বড় হবে বলে জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা। হামলায় ইরানের তেল উৎপাদন কেন্দ্র এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে এসব তথ্য জানিয়ে ইসরায়েলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলা হবে কয়েক দিনের মধ্যে।’

অপরদিকে ইরানের মিসাইল হামলার পর কথা বলেছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়ে ইরান ‘বড় ভুল’ করেছে। তারা এর মূল্য দেবে।

গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড। ইরানের হামলার পর নিজস্ব নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু। বৈঠক শুরুর আগে ইরানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করেন তিনি। এ ছাড়া নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরানের হামলা ব্যর্থ হয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কল্যাণে ইরানের হামলা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত। ইরান সরকার আমাদের প্রতিরক্ষার দৃঢ় সংকল্প, আমাদের জবাব দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প বোঝে না। (হামাস নেতা) ইয়াহিয়া সিনওয়ার বোঝেনি, মোহাম্মদ দেইফ বোঝেনি, (হিজবুল্লাহ প্রধান) হাসান নাসরুল্লাহ বোঝেনি, প্রধান সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ সুখর বোঝেনি। খুব সম্ভবত তেহরানে যারা আছে তারাও বোঝে না। তারা বুঝবে। যে আমাদের ওপর হামলা চালায়- আমরা তার ওপর হামলা চালাব।’

দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ইরানের প্রক্সি বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। তারা জয়ী হচ্ছেন। আর তারাই জয়ী হয়ে যাবেন এবং যুদ্ধের যতো লক্ষ্য আছে তার সবই অর্জন করবেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরশত্রু দেশ ইরান এবং ইসরায়েল। দশকের পর দশক ধরে বৈরিতা চললেও চলতি ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত কোনো দেশই পরস্পরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। ২০২৪ সালে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেবার প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছুড়েছিল আইআরজিসি।

উপরে