ক্যাপিটল হিলের সহিংসতায় উষ্কানী দাতাদের চিহ্নিত ও বিচার কল্পে তদন্ত কমিশন হচ্ছে
৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলায় উস্কে দেয়ার নেপথ্য কাহিনী উদঘাটনের অভিপ্রায়ে ৯/১১ এ সন্ত্রাসী হামলার সময়ে গঠিত কমিশনের ন্যায় একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসি। অর্থাৎ ইউএস সিনেটের বিচারে দলীয় সহানুভূতির কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প অব্যাহতি পেলেও ঐ হামলায় সমর্থকদের উস্কে দেয়ার দায় থেকে মুক্ত হতে পারেননি। স্পিকারের বক্তব্য অনুযায়ী যে কমিশন গঠিত হবে তারা বিস্তারিত অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে। আগে থেকেই হুমকি-ধমকি সত্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন এত দুর্বল ছিল এবং জঙ্গিরা কোত্থেকে ক্যাপিটল হিলে এমন ভয়াবহ আক্রমণ ও সহিংসতার সাহস পেয়েছে সে সবও অনুসন্ধান করবে এই কমিশন।
সোমবার প্রতিনিধি পরিষদের সকল ডেমক্র্যাট সদস্যের কাছে প্রেরিত পত্রে প্যালসি উল্লেখ করেছেন যে, এই কমিশন গঠনের মধ্যদিয়ে আমাদের পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শুরু হবে। ক্যাপিটল হিলে হামলায় উস্কে দেয়া নিয়ে বিরাজিত বহু প্রশ্নের জবাব পাওয়ায় সম্ভব হবে। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট-গণনার চূড়ান্ত পর্যায়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ঐ হামলায় পুলিশ অফিসারসহ ৫ জনের প্রাণ ঝরেছে। আহত হয়েছেন বেশ ক’জন। এই কমিশনের দায়িত্বে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা কী ছিল সেটিও থাকবে। কারণ, সন্ত্রাসে লিপ্তদের দমনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে দায়িত্ব ছিল তা পালনে সীমাহীন কার্পণ্য করেছেন ট্রাম্প। ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েও সময়মত সাড়া পাননি কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরাও।
স্পিকারের পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা এবং কংগ্রেসম্যানদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে অতিরিক্ত বাজেট-বরাদ্দের প্রয়োজন রয়েছে। ইউএস সিনেটে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা বিচার সম্পন্নের দুদিন পরই স্পিকারের এমন পত্র ডেমক্র্যাটদের সাহস জুগিয়েছে ৬ জানুয়ারির জঘন্যতম অধ্যায়ের নেপথ্য মদদদাতার মুখোশ উন্মোচন এবং গুরুতর অপরাধী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করার সম্ভাবনায়। ডেমক্র্যাটরা মনে করছেন, ঐ জঙ্গি হামলা ও সহিংসতার নেপথ শক্তির মুলোৎপাটন ঘটানো সম্ভব হলেই ভবিষ্যতে এমন অনাচারের আশংকা দূর হবে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর উভয় দলের সমন্বয়ে ‘৯/১১ কমিশন’ গঠিত হয়েছিল। ঐ হামলার নেপথ্যেও ঘটনাবলি এবং সন্ত্রাসীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও শনাক্তে দু’বছর সময় লেগেছে কমিশনের। সেজন্যে কমিশনকে বেশ কবার গণ-শুনানীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত/মন্তব্য সংগ্রহ করতে হয়। প্রকাশ করা হয়েছিল ৫৬১ পাতার বিবরণী। ক্যাপিটল হিলের জঙ্গি হামলার জন্যে গঠিত কমিশনের ব্যাপারে প্রতিনিধি পরিষদে ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ার এডাম শিফ বলেন, মূল কারণ নির্ণয় করার জন্যেই উচ্চ পর্যায়ের দল-নিরপেক্ষ একটি প্যানেল দরকার। ট্রাম্পের আহবানই মূল প্রেরণা শক্তি ছিল নাকি নেপথ্যে আরো কোন চক্র রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক রীতিকে তছনছ করতে চেয়েছিল-সেটি জানার জন্যেই ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধানের বিকল্প নেই। এডাম শিফ আরো উল্লেখ করেছেন যে, সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার চিরাচরিত মনোভাব অনুযায়ী চরমপন্থি শ্বেতাঙ্গদের গণতান্ত্রিক মহলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরীর মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনকে হেনস্থা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন কিনা সেটিও জানা দরকার। বামপন্থি চরমপন্থিরা ট্রাম্পের অপকর্মের দোসর বলে কোন কোন মহল অভিযোগ করছেন। তারা ৬ জানুয়ারির সহিংসতার পরও নানাভাবে সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়-এমন কথাও আসছে গণমাধ্যমে। স্পিকারের আগ্রহ অনুযায়ী কংগ্রেসম্যান এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন না এ কমিশনে। বিভিন্ন সেক্টরের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্নরাই কমিশনের সদস্য হবেন।