গত বছর সর্বাধিক মৃত্যু হৃদরোগ, ডায়াবেটিস আর ক্যান্সোরে: ডব্লিউএইচও
ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগগুলো এখন বিশ্বের মানুষের অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে দুই দশক আগেও পৃথিবীতে এ পরিস্থিতি ছিল না। এ নাটকীয় পরিবর্তনটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে এক দশক ধরে।
আজ বিৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণগুলোর মধ্যে সাতটিই অসংক্রামক রোগ। ২০০০ সালে যেখানে ১০টি কারণের মধ্যে চারটি কারণ ছিল এ ধরনের রোগ। এছাড়া হৃদরোগ এখন সবচেয়ে বড় ঘাতক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে- বিশ্বের সমস্ত মৃত্যুর ১৬ শতাংশের জন্যই দায়ী এই রোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, আলঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশ) এবং ডিমেনশিয়ার (নিদ্রাহীনতা) নানা ধরন এখন মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। যেখানে ২০০০-১৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যু ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস অ্যাধানম গেব্রেইসাস বলেন, নতুন এই উপাত্ত হৃদরোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ শনাক্ত, প্রতিরোধ ও চিকিত্সার প্রতি বেশি করে নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। নতুন পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে, আমাদের অসংক্রামক রোগগুলোর দ্রুত প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এছাড়া শ্বাসনালী, ব্রঙ্কাস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারও বাড়ছে।
প্রতিবেদনে তুলে ধরা সাতটি অসংক্রামক রোগ ২০১৯ সালে ২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল, যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। এই রোগে গত বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ মারা গেছে। এরপরেই যথাক্রমে স্ট্রোক এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিসের অবস্থান।
মৃত্যুর শীর্ষ সপ্তম কারণ হিসেবে গতবছর জায়গা করে নিয়েছে নিদ্রাহীনতা। এই রোগে নারীদের মৃত্যু অস্বাভাবিক বেশি। গত বছর নিদ্রাহীনতায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই ছিলেন নারী। তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে ডায়াবেটিস। পুরুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ভূমিকা সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালের তুলনায় পুরুষের মধ্যে ডায়াবেটিসে মৃত্যু ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে গত ২০ বছরে সংক্রামক রোগের কারণে মৃত্যুর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তবে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে এ ধরনের রোগগুলো এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইচআইভি/এইডস ২০০০ সালে মৃত্যুর অষ্টম শীর্ষ কারণ ছিল। ২০১৯ সালে তা ১৯তম অবস্থানে চলে গেছে। আর যক্ষ্মা ২০০০ সালে যেখানে সপ্তম স্থানে ছিল, ২০১৯ সালে তা ১৩তম অবস্থানে নেমে গেছে, তবে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ ১০ ঘাতকব্যাধির মধ্যে এখনও রয়ে গেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার মতো আঘাতজনিত মৃত্যু এবং মাদকাসক্তির কারণে মৃত্যুর বিষয়টিও প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও। সড়ক দুর্ঘটনায় বিশেষত আফ্রিকায় মৃত্যু বেশি। মাদকাসক্তিতে আমেরিকা মহাদেশে মৃত্যু ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৩০০ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান