ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২ অক্টোবর, ২০২০ ১৮:৫৫

ট্রাম্পের বয়স-অতিরিক্ত ওজনে করোনা জটিলতার শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্পের বয়স-অতিরিক্ত ওজনে করোনা জটিলতার শঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের জটিলতার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে করোনাভাইরাসের গুরুতর জটিলতায় ফেলেছে।

চিকিৎসকদের মতে, বয়স এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোভিড-১৯ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

৭৪ বছর বয়সী মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের ও স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনা আক্রান্তের খবর দিয়েছেন।

গত মার্চে বিখ্যাত মেডিক্যাল সাময়িকী দ্য ল্যান্সেটে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাসে মানুষের গড় মৃত্যুর হার প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে সত্তরোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই হার ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। গবেষণাটি চীনে করোনাভাইরাস মহামারির তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসক ব্যারি ডিক্সন বলেছেন, ট্রাম্পের যদি নিউমোনিয়া সংক্রমণ দেখা দেয়, তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। করোনার সঙ্গে যাদের নিউমোনিয়া শুরু হয় তাদের মৃত্যু হার অনেক বেশি; বিশেষ করে ৬৫ উর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি আরও প্রকট। এছাড়া হৃদরোগ বা মস্তিষ্কের রক্তনালীর সমস্যা যাদের রয়েছে তারাও একই ধরনের ঝুঁকিতে আছেন।

ডিক্সন বলেন, যদি তার নিউমোনিয়া গুরুতর আকার ধারণ করে তাহলে মারা যাওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকি আছে। পাশাপাশি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ; বিশেষ করে যাদের কো-মরবিডিটি অর্থাৎ অতিরিক্ত ধূমপান, উচ্চ-ডায়াবেটিস অথবা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ যাদের আছে তাদেরকে করোনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে আমরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারণ চিহ্নিত করেছি সেগুলো হলো- তার বয়স এবং অতিরিক্ত ওজন। এসবও করোনায় তার উচ্চ-ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, শুরুতে মৃদু উপসর্গের মানে এই নয় যে, কেউ এই রোগটির মারাত্মক প্রভাব এড়াতে পারবেন। দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি কিংবা উন্নতি ঘটবে কিনা তা জানার জন্যও কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময়ের দরকার হয়।

অস্ট্রেলীয় এই চিকিৎসক বলেন, আমরা প্রথম সপ্তাহে রোগীদের খুব মৃদু উপসর্গগুলো দেখতে পাই, এটি একেবারে সাধারণ। দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে জানা যায়, আসলে নিউমোনিয়া সংক্রমণ ঘটবে কিনা।

ডিক্সন বলেন, আপনি যদি দেখেন যে, যারা সবেমাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মাত্র পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এসেছে; তাদেরকে সাধারণত সুস্থ দেখা যায়। আমরা সেসব রোগীকে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেই। তবে যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, তখন তাদের হাসপাতালে আসতে বলা হয়। কারণ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর অবস্থা খুবই ভালো থাকলেও মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে তা গুরুতর হতে পারে।

‘তখন খুব দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, যা আমরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্ষেত্রে দেখেছি।’

আরেক সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার কলিগনন বলেন, যে কারও কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে তার মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। আমার প্রথম পরামর্শ থাকবে, তার হৃদরোগ এবং ফুসফুসের সমস্যা আছে কিনা আগে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপরই কেবল সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে, তাকে হাসপাতালে নিতে হবে নাকি বাসায় থাকতে হবে।

‘তিনি যদি ভালোভাবে হাঁটাচলা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন তাহলে ঠিক আছে। এক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য বাড়িতে থাকলেও চলবে। তবে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে শারীরিক অবস্থার আনুপাতিক অবনতি ঘটবে। যে কারণে তিনি কীভাবে শ্বাস নিচ্ছেন এবং শরীরের অবস্থা কেমন; সে সম্পর্কে জানার জন্য নিয়মিত নজরদারি দরকার।’

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৪ বছর, তাদের প্রতি ২৫ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর ঝুঁকি আছে।

 

উপরে