ফ্রান্সে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
ফ্রান্সে করোনা ভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করাটা ছিল স্প্রিন্টের মতো, আর দ্বিতীয় ঢেউটি হবে ম্যারাথনের মতো। ফ্রান্সের করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যাপারে ধারণা দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রধান ডা. অলিভার জোনস-বোইয়া।
ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসের লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়ায় তরুণরা অবাধ সামাজিক চলাফেরা করায় প্যারিস, বোর্ডক্স ও ভূ-মধ্যসাগরীয় উপকূলীয় মার্সেলের মতো বড় বড় শহরগুলোর হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরাসি হাসপাতালগুলো এখন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউ মোকাবিলার সময় বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটালের জরুরি সেবা বাদে অন্যান্য সকল সেবা স্থগিত রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার সব সেবাই চালু রাখার চেষ্টা করছে হাসপাতালটি। ফ্রান্সের সব হাসপাতাল জুড়েই কর্মীরা এখন প্রথম ধাপের চেয়ে বেশি করোনা রোগীর মুখোমুখি হচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের রোগীদের উপসর্গ কমিয়ে আনতে বোর্ডক্স ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ স্টেরয়েড ওষুধ মজুত ও ভেন্টিলেটর সেবা উন্নত করছে। এ দুই ব্যবস্থা করোনা রোগীদের লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার হার কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
তবে অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান করোনা রোগীর সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. ক্যাথেরিন ফ্লরো। তিনি বলেন, শেষবারের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে। কারণ আমি মনে করি এবারের ঢেউ আগের চেয়ে বেশি হবে।
এ বছরের শুরুর দিকে ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঘটতে থাকে। কিন্তু দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করায় বিস্তারের লাগাম টানতে সক্ষম হয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি।
বর্তমানে দেশটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে একদিনে রেকর্ড ১০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হন। ভাইরাসটির ক্লাস্টারের সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দেশজুড়ে আইসিইউতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হারে।
এদিকে, এদিকে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর এ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩১ হাজার ৯৭৬ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ কোটি ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৪ জন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ২ লাখ ১ হাজার ৩৪৮ জন। বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যাও এই দেশটিতে। এ নিয়ে ৬৮ লাখ ২৮ হাজার ৩০১ জন এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় এবং মৃতের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় এবং মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৬৮৬ জন। এবং আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৭৪ জন।
করোনায় মৃতের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে মেক্সিকো। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭১ হাজার ৯৭৮ জন। আর এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৩১ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৯ জন। আর মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৯১৭ জন।
সুস্থতার দিক থেকেও প্রথম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র (৪১ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ জন), দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত (৪০ লাখ ২২ হাজার ৪৯ জন), এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে ব্রাজিল (৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১২ জন)।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৫টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।