করোনাকালে ফিজিক্যালি ফিট থাকতে করণীয়
মহামারি করোনাভাইরাসে প্রায় সবাই ঘরে বন্দি। সময় কাটছে আলস্যে। ফলে কর্মহীন শরীরে জমছে বাড়তি মেদ। তার ওপর করোনা প্রতিরোধে এই সময়ে দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
বেশ কিছু ঝামেলাবিহীন ব্যায়াম বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বয়স বেশি হলে, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ, হাইপারডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া—এই জাতীয় অসুখ থাকলে দীর্ঘদিন হাঁটতে না পারলে বা ব্যায়াম করতে না পারলে সমস্যা আরো বাড়ে। কাজেই শুয়ে-বসে না থেকে দিনভর সচল থাকতে হবে। বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন?
১. ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোরকদমে হাঁটছেন ছাদে বা ট্রেডমিলে, আবার কেউ করেন যোগাসন। কিন্তু তাতে পুরো কাজ কখনো হয় না। ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয় তা জানতে হবে।
২. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারিরীকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করতে হবে পেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।
৩. অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। এই লকডাউনে তা করবেন কীভাবে। তাই ট্রেডমিল বা ছাদে হাঁটুন, স্পট জগিং করুন, স্পট স্কিপিং করুন বা স্ট্যাটিক সাইকেল চালান।
৪. সাধ্যমতো জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়। টানা ২০-৩০ মিনিট। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবেন। এমন গতিতে যাতে হাঁপিয়ে হলেও দু-চারটে কথা বলা যায়, কিন্তু গান গাওয়া যায় না।
৫. হাঁটু-কোমর-গোড়ালির অবস্থা দেখে নেবেন। হার্ট-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। তবে হাঁটা বা জগিংয়ের আগে ভালো হাঁটার জুতা পরে নেবেন। না হলে পায়ে ব্যথা হতে পারে।
৬. স্ট্রেচিং কী? স্ট্রেচিং কীভাবে করতে হয় তা কমবেশি সবাই জানে। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার জন্য এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। পা-কোমর-শিরদাঁড়ার স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে। কোনো ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনো সমস্যা না থাকলে করতেই পারেন।
৭. পেশী জোরদার বা মাসল স্ট্রেন্দেনিং করার ব্যায়াম দুভাবে করা যায়। ওজন নিয়ে ও শরীরের ওজনকে ব্যবহার করে। যাকে বডি ওয়েট ট্রেনিংও বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিভিন্ন রকম স্কোয়াটিং আছে, তেমনই রয়েছে লেগ রাইজিং, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ ইত্যাদি। তবে বয়স্ক বা ক্রনিক অসুখ আছে বা ফিটনেস কম বা হাঁটু-কোমর ব্যথা আছে এমন মানুষের পক্ষে অভ্যাস না থাকলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তার জন্য উপযোগী ব্যায়াম করা উচিত; অন্যথায় বিভিন্ন রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। সুস্থরা অবশ্যই করতে পারেন এর সবকটি ব্যায়াম।
৮. ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে, যাতে সুরের তালে-তালে অ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, সব হয়ে যায়। সে রকমই একটি হল টাবাটা। বয়স কম হলে, ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতে পারে।
৯. জুম্বা করতে পারেন। তবে বয়স কম ও ফিটনেস বেশি থাকলে তবেই। বেশি বয়সেও ফিটনেস ভালো থাকলে, হাঁটু-কোমর ঠিক থাকলে করতে পারেন। যাঁরা জুম্বা করেন, এই সময় তা ছেড়ে দেবেন না। জুম্বাতে আপনার শরীর যেমন ভালো থাকবে, মনও হালকা হবে একটু।
১০. ইয়োগা করতে পারেন। এটা সব বয়সী মানুষই করতে পারেন, এটার জন্য স্পেসও খুব কম লাগে। তাই বাসার যেকোনো জায়গায় এটা করতে পারবেন।
১১. মেডিটেশন। আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। কারণ এই সময়টাতে আমরা সবাই কোনো না কোনো মানসিক স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কেউ হয়তো বা শারীরিক, কেউ অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন, যা মানসিক স্ট্রেসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; তাই ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন।
এর পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় টানা বসে থাকার অভ্যাস থাকলে সেটা পরিহার করুন। তা না হলে ব্যায়ামের উপকারিতা সঠিকভাবে পাবেন না।
ব্যায়াম করলে কী হবে?
১. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যাবে।
২. হার্ট ও ফুসফুসকে তাজা রাখে, করোনাভাইরাসের জটিলতা ঠেকাতে যার বড় ভূমিকা রয়েছে।
৩. সুগার-প্রেসার-কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রথম দুটির সঙ্গে কোভিড-১৯-এর সম্পর্ক রয়েছে।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হাড় নরম হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে।
৫. ফিজিক্যাল ফিটনেস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে হলে তার সঙ্গে লড়তে যা আমাদের একান্ত দরকার।
লেখক : বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; চিফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।