যৌন সমস্যা যখন হৃদরোগের লক্ষণ
পুরুষদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সমস্যা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন। কোনো পুরুষই এ সমস্যায় ভুগতে চান না, বিশেষ করে বিবাহিত পুরুষ। এ সমস্যায় যৌন মিলনের জন্য পুরুষাঙ্গ যথেষ্ট দৃঢ় হতে পারে না। অনেক পুরুষ এই সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অথবা হার্বাল বা কবিরাজের শরণাপন্ন হন। অথচ নতুন একটি গবেষণায় এই সমস্যার জন্য দ্রুত হৃদরোগের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কারণ? গবেষকরা বলছেন, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হার্টের রোগের লক্ষণ হতে পারে। গবেষণাটি ভাস্কুলার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ও হার্টের রোগের ওপর পরিচালিত পূর্বের ২৮টি পরীক্ষা বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, হার্ট ও রক্তনালীর কার্যক্রম ব্যাহত হলে সহবাসের সময় পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হতে পারে না। এ বিষয়ে মেডিক্যাল নিউজ টুডে ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রক্তনালীগুলো পুরোপুরি প্রশস্ত হতে ব্যর্থ হয় এবং শরীরের নিচের অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত দ্রুত যেতে পারে না। ফলে সহবাসের সময় পুরুষ নারীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না।
এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন অথবা রক্তনালীর কার্যক্রমে বিঘ্নতা হচ্ছে অ্যাথেরোসক্লেওরোসিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ। অ্যাথেরোসক্লেওরোসিস নামক কন্ডিশনে ধমনীর ভেতরের দেয়ালে চর্বিযুক্ত ম্যাটারিয়াল পুঞ্জিভূত হয়ে রক্তনালী শক্ত ও সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হার্টের অস্বাভাবিকতা দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসক আপনাকে অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারবে। তারা আপনাকে ব্লাড প্রেশারের ওষুধ, খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন ও শরীরচর্চার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। আপনি জেনে খুশি হবেন, নিয়মিত যোগব্যায়াম চর্চার পাশাপাশি হাঁটা বা ধীরে দৌঁড়ানোর মতো অ্যরোবিক এক্সারসাইজ হার্টের রোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমায়।
বোস্টন ইউনিভার্সিটির হার্ট স্পেশালিস্ট নাওমি হামবুর্গ ও ম্যাট ক্লুগি একটি স্বাস্থ্য সম্পাদকীয়তে লিখেছেন: ‘ইরেক্টাইল ডিসফাংশন-এর পূর্বাভাস দিতে পারে যে ভবিষ্যতে কার্ডিওভাস্কুলার (হার্ট ও রক্তনালী) রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে ইন্টারমিডিয়েট রিস্কে আছে এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে এ পূর্বাভাস সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যাদের উচ্চ মাত্রায় উচ্চ সংবেদনশীল সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন নামক প্রদাহের ব্লাড মার্কার রয়েছে তারা ইন্টারমিডিয়েট রিস্কের অন্তর্ভুক্ত।’
হার্টের রোগজনিত অকাল মৃত্যু এড়াতে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগের প্রারম্ভিক লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়। আপনার জীবনযাপন থেকে যত বেশি অসঙ্গতি তাড়াবেন, হার্টের রোগের ঝুঁকি তত বেশি কমবে। আপনাকে হার্টের রোগের ঝুঁকির বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে কিংবা সচেতন থাকতে হবে, যেমন- স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপ। হার্টের চিকিৎসা করলে পুরুষত্বহীনতার সমস্যাও দূর হবে ও যৌনজীবন সুখের হবে। সুস্থ হার্ট ও সুখময় যৌনজীবন আয়ু বাড়ায়। কাজেই ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।