করোনা আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, জেনে নিন করণীয়
পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে অসহায় হয়ে পড়েছে আধুনিক বিশ্ব। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও ধনী রাষ্ট্র আমেরিকায় দিশেহারা এই ভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও ব্রাজিলের মতো দেশ।
বর্তমানে মহামারী এই ভাইরাসের ভয়াবহতায় বিশ্বের প্রতিটি মানুষ আক্রান্তের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়, এরচেয়ে খুব কম নয় এই রোগের আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা। সম্প্রতি ইতালির ব্রেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসাধীন ৭২৫ জন সব বয়সী করোনা রোগীর মধ্যে ১৫ শতাংশ রোগীর স্নায়ু ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেইসব রোগীর সিটি স্ক্যান করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা প্রবল।
সাধারণত ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বাড়তি ওজনের জন্য হৃদরোগ হতে পারে। হাইপার টেনশন এবং পারিবারিক জেনেটিক অসুস্থতার ফলেও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। আর করোনার কারণেও দেখা দিয়েছে হাইপার টেনশন। রোগের ভয়ের সঙ্গে অনেকেরই রয়েছে কাজ হারিয়ে বেকার হওয়া বা ব্যবসায় লোকসানের ঝুঁকিও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব মিলিয়ে বেশ অস্থির একটা সময় পার করছি আমরা, যা থেকে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক। গড়ে মিনিটে ৭০ বার হার্ট বিট সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। এর ব্যতিক্রম হলে অর্থাৎ অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিত রক্তসঞ্চালন হলে তখনই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দেয়।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো জেনে নিন
• নিজের বা প্রিয়জনের জন্য অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
• অতিরিক্ত ক্লান্তিই পরে অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়
• দুর্বলতা হল রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফল। আর্টারিগুলো সরু হয়ে যাওয়ার ফলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ক্লান্তি তথা দুর্বলতা কিন্তু অ্যাটাকের অশনি-সংকেত
• যদি বুকে, কাঁধে, হাতে প্রায়ই ব্যথা হতে থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
• জ্বর অনেক রোগের উপসর্গ নিয়ে আসে। হার্ট অ্যাটাকের আগে বহু রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, তারা হালকা জ্বরে ভুগছেন
• যদি নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা যায়, দমবন্ধ লাগে, তবে মোটেও অবহেলা করা যবে না।
সুস্থ থাকতে... • বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে। অতিরিক্ত ওজন যেমন আমাদের সুস্থতার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতি কম ওজনের ঝুঁকিও কিন্তু কম নয়
• সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, মিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা প্রাকৃতিকভাবেই সুস্থ থাকতে পারি। আর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে।
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে
• রোগীর শরীরের পোশাক আলগা করে দিতে হবে। রোগীকে খোলা জায়গায় আলো বাতাসযুক্ত রুমে শুয়ে বিশ্রাম করতে দিতে হবে এবং যাতে ভয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
• ঘেমে গেলে অল্প ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
• সাধারণত হার্ট অ্যাটাক ১০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগীকে খুব দ্রুত এবং জোরে ঘন ঘন কাশি দিতে হবে যেন কাশির সাথে বেশি পরিমাণে কফ বা থুতু বের হয়ে আসে।
• প্রতিবার কাশি দেবার পূর্বে দীর্ঘশ্বাস নিতে হবে। এভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘন ঘন অর্থাৎ ২ সেকেন্ড পর পর কাশি এবং দীর্ঘশ্বাস দিতে হবে।
• দীর্ঘশ্বাস ফুসফুসের মধ্যে অক্সিজেন পেতে সাহায্য করে এবং কাশি বুকে যে চাপের সৃষ্টি হয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে।
• প্রাথমিক সেবা দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
এছাড়া করোনার এই সময়ে রাস্তায় বের হলে ভালো মানের মাস্ক ব্যবহার করুন। দূষণ ও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। আর এজন্য প্রতিদিন ভিটামিন সি, ওমেগা-৩ ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান।