ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৭ আগস্ট, ২০২০ ১১:৫৪

অবশেষে মিললো আসল পরিচয়, অভিনেত্রী চম্পা-ববিতার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে বাইকার ফারহানা!

অনলাইন ডেস্ক
অবশেষে মিললো আসল পরিচয়, অভিনেত্রী চম্পা-ববিতার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে বাইকার ফারহানা!

গায়ে হলুদের দিন শহরময় বাইক র‌্যালি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাই’রাল হয়েছেন যশোরের মে’য়ে ফারহানা আফরোজ। তবে তিনি নববধূ নন, তার বিয়ে হয়েছে আরো তিনবছর আগে। দেড় মাস আগে তার কোলজুড়ে এসেছে এক ছে’লে শি’শু সন্তানও।

বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে না পারায় ছে’লে জন্মের পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সে অনুষ্ঠানকে ঘিরেই শখ পূরণ করেন ‘লেডি বাইকার’ খ্যাত ফারহানা। তবে তার এ কাজকে ভালো’ভাবেই দেখছেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি, ফারহানা স্বাধীনচেতা মানুষ। আর নেটিজেনদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, অনেকেই তার প্রশংসা করলেও অনেকেই আবার তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন।

ফারহানার বান্ধবী নওরীন মোক্তাকি জয়া বলেন, ‘যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ফারহানার সঙ্গে আমা’র বন্ধুত্ব। এরপর যশোর আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজে একসঙ্গে এইচএসসির পাঠ শেষ করেছি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য

দুইজন দুই শহরের বাসিন্দা হলেও যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব ছিল অটুট। ফারহানা খুব ভালো মনের মানুষ, মিশুক এবং সেলফ্ ডিপেন্ডেডেট। সবার উপকার করে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ও (ফারহানা) বাইক চালাতে পারে তাই শখ ছিল নিজের বিয়েতে বাইক রাইডিং করার। ও শো-অফ করতে চায়নি। নেটিজেনরা বানোয়াট কথা বলে ওকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে।’জয়া বলেন, ‘ওর তো তিন বছর আগে

বিয়ে হয়েছে। এক বাচ্চার মা।গত ৩০ জুন ওর বাচ্চা হয়েছে, ছে’লে সন্তান। বিয়ের সময় অনুষ্ঠান করতে পারেনি।তবে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল। এতদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান করছে, সেখানে সে তার শখ পূরণ করেছে তাতে অন্যদের সমস্যাটা কি?’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ রাইড শেয়ারে মে’য়ে চালকদের সঙ্গে বসতে পারে অথচ ফারহান রাইডিংকে সহ্য করতে পারছে না, এটা সংকী’র্ণতা।ফারহানর বন্ধু, পেশাদার আলোকচিত্রী তরু খান বলেন, ‘ফারহানা আমা’র কলেজ পর্যায়ের

বন্ধু। সে সময় ও আমাদের সঙ্গেও বাইক চালাতো। ও একজন ভালো বন্ধু। ওর সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করা যায়। ফারহানা স্বাধীনচেতা মে’য়ে।তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আম’রা বন্ধুরা ১৫/২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শহর ঘুরেছি। এতে দোষ কোথায়? লোকজন নেগিটিভ মন্তব্য করছে, খা’রাপ লাগছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রত্যেকে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেবে।’

এদিকে ফারহানার প্রতিবেশী তমাল আহমেদ বলেন, ‘ফারহানার মতো মে’য়েই হয় না। ভালো মে’য়ে। তার বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। পারিবারিকভাবে মেনে নেওয়া নিয়ে জটিলতা ছিল।বিয়ে মেনে নেওয়ার পর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ফারহানা নেটিজেনরা যা করছে তা ঠিক না। যশোরে মে’য়ে তানিয়া পাইলট হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী। নারীরা অনেক বিষয়ে এখন অগ্রগামী। ফারহানার ব্যাপারে এতো কনজারভেটিভ কেন বুঝি না। এটা ফারহানার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার শামিল।’

তমাল আরও বলেন, ‘ফারহানার পরিবারটি অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতিকমনা ও প্রগতিশীল। বাংলাদেশের অ’ভিনয় জগতের তিন নক্ষত্র সুচন্দা, ববিতা ও চ’ম্পা-ফারহানার চাচাতো ফুফু। ফলে সে স্বাধীনচেতা হিসেবে বড় হয়েছে।’গত ১৪ আগস্ট পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফির সঙ্গে হওয়া বিয়ের অনুষ্ঠান হয় যশোর

শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার মে’য়ে ফারহানা আফরোজ। এর আগের দিন ১৩ আগস্ট ছিল ফারহানার গায়ে হলুদ।গায়ে হলুদের দিনে শহরজুড়ে বন্ধু-বান্ধব ও সাথীদের নিয়ে বাইক র‌্যালি (মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা) করেন কনে ফারহানা। ওই শোভাযাত্রার ছবি ফটোগ্রাফার তার অনুমতি নিয়েই ফেসবুকে দেন। এরপর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের ছবি ভাই’রাল হয়।

ফারহানা আফরোজ বলেন, ‘সবাই নেচে-গেয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান উদযাপন করেছি। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি তাই বাইক চালিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন। এটি আমা’র নিজস্ব উদ্যোগে

করেছি। অনেক আনন্দ করেছি বন্ধু-বান্ধব ও সাথীরা।যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারহানা। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভা’র্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন ফারহানা।

ফারহানা বলেন,‘২০০৭ সাল থেকে বাইক চালাই। মূলত বাড়িতে সাইকেল ও প্রাইভেট’কার চালানো শেখা হয় ছোটবেলাতেই। বাবার মোটরসাইকেলটিও চালানোর একটা ঝোঁক ছিল। তাই বাবার অজান্তেই কোনো প্রশিক্ষক ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো শিখি। ২০১৩ সালে ঢাকায় আসার পর বন্ধুদের বাইকে হাত পাকাই। এরপর নিজে স্কুটি কিনি।ওই স্কুটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করি।’

তিনি বলেন, ‘বাইক র‌্যালির ছবি ফেসবুকে আসার পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তারা আমা’র বাইক চালানোর বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। ফলে তারা ছবি ও ভিডিও দেখে বেশ আনন্দ করেছেন। কিন্তু নেটিজানরা বিষয়টিকে ভালো’ভাবে নিতে পারছে না। তারা আমা’র চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন। এটা আমি মানতে পারছি না। যে কারণে ছবি ভাই’রাল হবার পর আমি নিজেই বাইক র‌্যালির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করি।’

ভাই’রাল হওয়া এ তরুণী বলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি হেলিকপ্টার চালানোও শিখতাম। আমি সবকিছুই চালানো শিখতাম। স্বামীর পক্ষ থেকেও কোনো প্রকার আ’পত্তি নেই।’ফারহানার স্বামী হাসনাইন রাফি বর্তমানে ঢাকার গাজীপুরে কর্ম’রত। ফারহানাও শিগগিরই ঢাকা যাবেন এবং শ্বশুরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া মোটরবাইকটি ঢাকা থেকেই কিনবেন।

 

উপরে