ছবিতেই নিমগ্ন বিপাশা হায়াত
কৈশোর আর অভিনয় একসঙ্গে শুরু বিপাশা হায়াতের। থিয়েটার, নাটক ও চলচ্চিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী তিনি। টেলিভিশন নাটকের নারী শিল্পীদের জৌলুশ কতটা প্রখর হতে পারে তার উদাহরণও তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য মনে রাখার মতো চরিত্রে কাজ করেছেন। যে কাজগুলো অতটা ব্যতিক্রম নয় তাতেও বিপাশার অভিনয় ঠিকই আলাদাভাবে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মেধার দ্যুতি ছড়িয়েছেন লেখালেখি ও নির্মাণে। তবে চেনা এই অঙ্গন ছেড়ে এখন একেবারেই অন্য ভুবনের বাসিন্দা প্রিয় এই শিল্পী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে এখন কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। তবে চারুকলায় পড়াশুনাটাও একেবারেই ভালো লাগার জায়গা থেকে। তিনি হয়তো আগেই জানতেন, একদিন ছবি নিয়েই তার দিব্যি দিন কেটে যাবে। তাই তো এত দর্শকের ভালোবাসা, তারকাখ্যাতি, অর্থ, সম্মানের হাতছানিকে পাশ কাটিয়ে বিপাশা নিভৃতে ছবি এঁকে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের মতো ছবি আঁকাটাও আমার ভালোবাসার জায়গা। কোনোটাকেই পেছনে ফেলতে পারি না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা ও ভাবনার জগতে পরিবর্তন হয়। এই সময়ে এসে আমার কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য মনে হচ্ছে আঁকার জগৎ।’
বিপাশা বিমূর্ত ছবি আঁকতেই বেশি পছন্দ করেন। অনেকে ভেবে থাকেন, যারা নিখুঁত করে কোনো পোর্ট্রটে বা দৃশ্যকল্প আঁকতে পারে না তারাই অ্যাবসট্রাক্ট ছবি আঁকেন। বিপাশাও বিষয়টি জানেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আসল বিষয় তা নয়। মূর্ত ছবি আঁকতে না পারলে বিমূর্ত ছবি আঁকা যায় না। আমি যেহেতু চারুকলায় পুরো পড়াশুনাটাই করেছি, সুতরাং আমাদের ছবি আঁকার পুরো প্রক্রিয়াটার থিওরি ও প্রাকটিক্যাল বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে। এরপর আমি বিমূর্ত ছবি আঁকাকে বেছে নিয়েছি।’ ছবিতে কী ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন, জানতে চাইলে বিপাশা বলেন, ‘আমি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে কাজ করি। এক্ষেত্রে জীবনকে দেখার অভিজ্ঞতা খুব কাজে লাগে। মানুষকে যত ভালোভাবে বোঝা যায় এ ধরনের ছবি তত নিবিড়ভাবে আঁকা যায়। এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে আমি খুব উপভোগ করি। তাই ঘর সংসার সামলে যখন নিজের স্টুডিওতে ঢুকি তখন আমাকে কেউ বিরক্ত করে না। এজন্য তৌকীর ও আমার সন্তানদের প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। আমি যখন ছবি আঁকার মধ্যে থাকি তখন আমি যে একজন অভিনেত্রী, মা, মেয়ে বা স্ত্রী সেসব কথা ভুলে যাই।’
বিপাশা এখন তার একক চিত্র প্রদর্শনীর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে তো বিদেশে আটকে পড়েছিলাম। আমেরিকায় ছিলাম একা অনেক দিন। সেই সময়ে ছবি আঁকার কাজটা বেশ এগিয়েছে। আমি এখন ইন্টারন্যাশনাল স্পেসে নিজের ছবি পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছি। আশা করছি সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে ছবি দিয়ে দারুণ কিছু কাজ সবাইকে উপহার দিতে পারব।’
অভিনয়কে মিস করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয়টা সত্যি খুব ভালোবাসি। কিন্তু সব মিলিয়ে হয়ে উঠছে না। তার মানে এই নয় যে অভিনয় করাটা মিস করি না। সব গুছিয়ে যদি করা সম্ভব হয় আবারও অভিনয় করব। তবে নিয়মিত করতে পারব কি না জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু অভিনয় নয়, লিখতেও খুব ভালোবাসি। কিন্তু এখন ছবি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য এতদিকে মন দিতে পারছি না।’\