একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শমিতা, মুখ থুবড়ে পড়ে ক্যারিয়ার
ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনদের যে যে সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তার কোনওটারই মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। ঘুরতে হয়নি পরিচালক বা প্রযোজকদের দরজায় দরজায়। দাঁড়াতে হয়নি আপসের সামনেও। কোনও সিনেমা থেকে বাদ দেওয়াও হয়নি তার অভিনীত চরিত্র। বলিউডে টিকে থাকার সব যোগ্যতা নিয়েই অভিনয় জীবনে এসেছিলেন শমিতা শেঠি।
২০০০ সালে অভিনয় শুরু করেছিলেন নায়িকা শিল্পা শেঠির বোন শমিতা। কিন্তু মাত্র সাত বছরে তার ক্যারিয়ার মুখ থুবড়ে পড়ে। বহিরাগত না হয়েও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা মজবুত করতে পারেননি তিনি।
ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র এবং তার স্ত্রী সুনন্দার ছোট মেয়ে শমিতার জন্ম ১৯৭৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে তার কোনো দিনই ছিল না। সিডেনহ্যাম কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হওয়ার পরে তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স করেন।
এর পর ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মলহোত্রর কাছে তিনি কাজ করতে শুরু করেন। মনীশ তাকে উৎসাহ দিতেন অভিনয়ে ক্যারিয়ার তৈরির জন্য। মনীশের কথাতেই শমিতা আগ্রহী হন অভিনয় করতে।
কাজের সূত্রে মনীশের কাছে মাঝে মাঝেই আসতেন বন্ধু কর্ণ জোহর। শমিতাকে দেখে পছন্দ হয় কর্ণের। তিনি তাকে নিয়ে যান আদিত্য চোপড়ার কাছে। শমিতাকে আদিত্য তার পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। কিন্তু শর্ত রাখেন তাকে আরও মোটা হতে হবে। বডিকে টোনড আপও করতে হবে।
তিন মাসে পাঁচ কেজি ওজন বাড়িয়ে ‘মোহাব্বতেঁ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শমিতা। অমিতাভ-শাহরুখ-ঐশ্বরিয়ার এই তারকাখচিত ছবিতে অনেক নবাগত কুশীলবও অভিনয় করেছিলেন।
শমিতার পাশাপাশি এই ছবিতে উদয় চোপড়াকেও সুযোগ দেয়া হয়। পাশাপাশি ছিলেন কিম শর্মা, যুগল হংসরাজ, জিমি শেরগিলের মতো তরুণ অভিনেতারা। প্রবীণ ও নবীনের মেলবন্ধনে এই ছবি বক্স অফিসে সুপারডুপার হিট হয়েছিল।
শোনা যায় শমিতাকে সে সময় আমির খান ‘লগান’ ছবিতে অভিনয়ের অফারও দিয়েছিলেন। কিন্তু শমিতা বেছে নেন যশরাজ ফিল্মসকেই। ‘লগান’ যে এত সফল হবে, তা কেউই আগে অনুমান করেননি। তবে ‘মহাব্বতেঁ’ থেকে নবীন অভিনেতাদের খুব একটা লাভ হয়নি ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে। এই ছবিতে অভিনয়ের সময়েই উদয় চোপড়া এবং শমিতার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। তবে ক্যারিয়ারের প্রথমেই যশরাজের মতো বড় ব্যানার নাকি মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল শমিতার। তিনি ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে হয়ে পড়েছিলেন।
প্রথম ছবির পরে শমিতার দ্বিতীয় ছবি মুক্তি পেতে সময় লেগেছিল চার বছর। কারণ তিনি নাকি যে কোনও ব্যানারে ছবি করতে আগ্রহী ছিলেন না। ‘সাথিয়াঁ’ ছবিতে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। আইটেম ডান্সও করেছিলেন। কিছু দক্ষিণী ছবিতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার বেশি কিছু নয়
২০০৫ সালে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘ফরেব’, ‘জেহর’, ‘বেওয়াফা’-র মতো ছবিতে সে বছর অভিনয় করেন শমিতা। কিন্তু কোনও ছবিতেই একক সুপারহিট নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। তাছাড়া অতিরিক্ত বাছাবাছির ফলে শমিতার কাছে সুযোগও কম আসছিল।
একটা সময় তার কাছে অভিনয়ের সুযোগ আসা বন্ধ হয়ে গেল। শেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ‘ক্যাশ’ ছবিতে, ২০০৭ সালে। সে বছরই ‘হে বেবি’ এবং ‘হরি পুত্তর’ ছবিতে তাকে দেখা গিয়েছিল বিশেষ ভূমিকায়।
ক্যারিয়ারের মতোই টানাপড়েন চলছিল শমিতার ব্যক্তিগত জীবনেও। উদয় চোপড়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল অল্প সময়ের। এরপর তার নাম শোনা গিয়েছিল আফতাব শিবদাসানির সঙ্গে।
আফতাবের সঙ্গে শমিতার সম্পর্ক নাকি এগিয়েছিল অনেক দূর। আফতাবের বোনের বিয়েতে শমিতাকে দেখা গিয়েছিল বাড়ির লোকের মতোই। শমিতার পরিবারের সদস্যরাও বিশেষ খাতির পেয়েছিলেন শিবদাসানি পরিবারের অনুষ্ঠানে।
কিন্তু তারপরেও কেন তাদের সম্পর্ক ভেঙে গেল, জানা যায়নি। এরপর মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে শমিতার ঘনিষ্ঠতা উঠে আসে ফিল্মি গুঞ্জনে। কিন্তু সেও থেকে যায় গুঞ্জন হিসেবেই। সম্পর্ক বা ক্যারিয়ার, কোনওদিকেই থিতু হতে পারেননি শমিতা।
পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সিরিয়াস সম্পর্কে ছিলেন। তাই মন দিতে পারেননি ক্যারিয়ারে। ফলে পিছিয়ে পড়েছিলেন।
এখানেই তার ভুল হয়েছিল, স্বীকার করেন শিল্পার বোন শমিতা। কারণ তার মনে হয়েছিল, অভিনেতাদের কখনও প্রচারমাধ্যম বা প্রচারের আলো থেকে দূরে সরে যেতে নেই। তাতে আখেরে ক্ষতি হয় ক্যারিয়ারের।
বড় পর্দায় সুযোগ না পেয়ে শমিতা এলেন টেলিভিশনে। অংশ নিলেন ‘বিগ বস’-এর মতো শো-এ। কিন্তু দেড় মাসের বেশি থাকতে পারলেন না। কারণ সে সময় তার দিদি শিল্পা বিয়ে করছিলেন রাজ কুন্দ্রাকে। দিদির জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তে তার পাশে থাকতে চেয়েছিলেন শমিতা।
পরে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ‘বিগ বস’-এ থাকতে তার ভালো লাগছিল না। সেখানকার পরিবেশ বা খাওয়া-ধাওয়া কোনও কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।
শিল্পার বিয়ের পরে শমিতা লন্ডনে চলে যান। ইন্টিরিয়র ডিজাইনিংয়ের কোর্স করে ফিরে আসেন দেশে। এরপর তাকে পাওয়া যায় ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হিসেবে। তিনি জানান, আর অভিনয় করতে চান না। অভিনয় থেকে দূরে সরে গেলেও তাকে নিয়ে খবর ভেসে আসত ইন্ডাস্ট্রিতে।
শোনা গিয়েছিল, হরমন বাওয়েজার সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্কও কোনও পরিণতি পায়নি। তাছাড়া এ সময়ে পোশাক বিভ্রাটসহ একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
অভিনয়কে বিদায় জানালেও বেশি দিন ক্যামেরাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারেননি শমিতা। ২০১৫ সালে তাকে ‘ঝলখ দিখলা যা’ এবং একটি ভিডিও শো-এ তাকে দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু ফিরতে পারেননি মূলস্রোতে।