সরকার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে না এলে বন্ধ হয়ে যাবে স্টার সিনেপ্লেক্স: মাহবুব রহমান রুহেল
শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, পর্যটনসহ দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাত যখন সচল তখন দেশের সিনেমা হল বন্ধ।
এটা সিনেমা ব্যবসায়ী ও হল মালিকদের জন্য হতাশাজনক।
এ অবস্থায় সরকার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে না এলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের জনপ্রিয় সিনেমা থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্স। বুধবার (১২ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণাই দিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি সরকারের কাছে ৫টিসহ মোট ৭টি দাবি তুলে ধরেছেন। যেগুলো পূরণ হলে স্টার সিনেপ্লেক্স এদেশে সিনেমা থিয়েটারের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। সেগুলো হলো-
১. নগরবাসীর বিনােদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে সিনেমা হলসমূহ খুলে দেয়া
২. জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণােদনা তহবিল ঘােষণা
৩. সিনেমা হলের টিকিটের ওপর সব ধরনের মূসক ও কর মওকুফের সুযােগ প্রদান
৪. সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমােদন
৫. উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্রসমূহ শর্তহীন ভাবে আমদানির অনুমতি প্রদান
এছাড়াও দুটি দাবি তিনি উপস্থাপন করেছেন। স্টার সিনেপ্লেক্স আছে এমন তিনটি শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির কাছে। শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে রুহেল বলেন, করােনাকালীন পরিস্থিতে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখা বিভিন্ন শপিংমলে ভাড়ায় পরিচালিত হয়। এই করােনাকালীন সময়ে শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া মওকুফ করা ও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেয়ার অনুরােধ করছি।
সর্বশেষ প্রযোজক সমিতির কাছে অনুরােধ করে বলেন, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলাে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সিনেমা হল খুললেই হবে না নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে আসবে না।
রুহেল আরও বলেন, ‘আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলাে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চমৎকার উদাহরণ হতে পারে । নির্ধারিত আসনের জন্য অল্পসংখ্যক লােক টিকিটের বিনিময়ে সিনেমা দেখে। অন্যান্য জনবহুল স্থানের তুলনায় এখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মানুষের বিনােদনের সুযােগ করে দেয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। স্টার সিনেপ্লেক্স বরাবরই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন। এখানকার কর্মীসহ আগত সবার জন্য বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, হলের আসনগুলাে নিয়মিত জীবাণুমুক্তকরণসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার সব ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
লক্ষ্যণীয় যে চীন, জার্মানি রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালি, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এরই মধ্যে সিনেমা হল চালু করা হয়েছে। ভারতেও এ মাসে সিনেমা হল খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। তাই নয়, সংস্কৃতি ও বিনােদনসংশ্লিষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহায়তাও করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। মুভি থিয়েটার ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলাের জন্য ২ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ৫ বিলিয়ন ইউরাে বরাদ্দ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য দিয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। এমন অবস্থায় আমাদের দেশেও সিনেমা হল চালু রাখতে সরকারের আন্তরিক সহায়তা জরুরি।’
সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড বলা যায় সিনেমা হলকে। হল না বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন অনতিবিলম্বে দেশের সিনেমা হল খুলে দেয়া হােক। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিনেমা হল পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাবে, তাই টিকিট থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ করা হােক। এছাড়া সুদবিহীন ঋণসহ পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।’
১৬ বছর ধরে স্টার সিনেপ্লেক্স এদেশে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে তিনটি শাখায় ১৫টি স্ক্রিনে সিনেমা দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন করে মিরপুরে চতুর্থ শাখা চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এমন অবস্থায় উপরোক্ত দাবি পূরণ না হলে তাদের সব ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন মাহবুব রহমান রুহেল।