ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১০ আগস্ট, ২০২০ ২১:৪২

‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’

অনলাইন ডেস্ক
‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের অন্যতম সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীতকারের সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে  ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ’, ‘এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে। তাকে স্মরণ করেছেন সংগীতাঙ্গনের চার তারকা। লিখেছেন মাসিদ রণ

সংগীতাঙ্গন অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ছে

সাবিনা ইয়াসমিন

নেই নেই, আলাউদ্দিন ভাই আর নেই (চিৎকার করে)। কী হচ্ছে এসব! আশপাশের সব মানুষগুলো চলে যাচ্ছে। সংগীতাঙ্গন অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছে। আমি এই মুহূর্তে কিছুই বলার পরিস্থিতিতে নেই। মাথা একেবারে শূন্য হয়ে আছে। শুধু চোখে ভাসছে তার সঙ্গে অসংখ্য গান, অসংখ্য স্মৃতির কথা। চলচ্চিত্রে তার অনেক কালজয়ী গান গেয়েছি। তবে অনেকে বলেন, আমার দেশাত্মবোধক গানের যে সমৃদ্ধ ভা-ার, তার জন্য আলাউদ্দিন ভাইয়ের অনেক অবদান।

৫০ বছরের সম্পর্ক আমাদের

আলম খান

যেসব সুরকার-সংগীত পরিচালকের গানের ওপর আজও আমাদের সংগীতাঙ্গন দাঁড়িয়ে আছে তারা প্রায় সবাই চলে গেছেন। এবার ছেড়ে গেলেন আলাউদ্দিন আলী। এখন শুধু পড়ে রইলাম আমি, শেখ সাদী খান আর আলী হোসেন। আলাউদ্দিনের সঙ্গে আমার বড় ভাই ছোট ভাই সম্পর্ক ছিল। ৫০ বছরের পরিচয় ও সম্পর্ক আমাদের। শুরুতে আমার সঙ্গে বেহালা বাজাত। পরে যখন সুরকার-সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করে তখন একটা প্রতিযোগিতা ছিল আমাদের মধ্যে। তার সিনেমার দুটি গান হিট হলে আমার তিনটি হতে হবে এভাবেই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করতাম। তবে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না এখনকার মতো। খুব ভদ্র মানুষ ছিল। আর নিজের কাজে অগাধ জানাশোনা। তার সবচেয়ে বিশেষত্ব আমি খুঁজে পেয়েছি, তা হলো সে কিছু গানে ফোক আঙ্গিকের সুর করেছে, কিন্তু তা প্রচলিত কোনো ফোক গানের মতো নয়। একেবারেই মৌলিক ফোক গান তৈরি করেছে। যা শ্রোতারাও দারুণ পছন্দ করে।

দেশাত্মবোধক গানে তার জুড়ি নেই

খুরশীদ আলম

প্রথমে আলাউদ্দিন আলী একজন বেহালা বাদক ছিলেন। অন্য দেশে জন্ম নিলে হয়ত বিশে^র সেরা বেহালা বাদকদের মধ্যে তার নাম থাকত। কিন্তু সংসারের চাপে পরে সুর করা শুরু করলেন। এতে তিনি সবদিক থেকেই সাফল্য পান। আটবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমাদের দেশের সব বড় শিল্পী তো আছেনই, ভারতেরও অনেক বিখ্যাত শিল্পী দিয়েও কাজ করেছেন। যেহেতু সংগীত পরিবারের সন্তান, তাই গান সম্পর্কে বিস্তর জানাশোনা ছিল। শিল্পীদের কঠিন সুর দিয়ে বিপদে ফেলতে ভালোবাসতেন। তার গান সবচেয়ে বেশি গেয়েছে সৈয়দ আব্দুল হাদী। মিতালী মুখার্জি খুব ভাগ্যবান, তার সেরা ১৫টির মতো গান মিতালী গেয়েছেন। আমি প্রথম ঝুমকা ছবিতে রুনা লায়লার সঙ্গে তার গান গাই। বেতারেও তার গান গেয়েছি। দেশাত্মবোধক গানে আলাউদ্দিন ভাইয়ের জুড়ি নেই। এমন অভিজ্ঞ মানুষের আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল সংগীতাঙ্গনে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

আপনজন হারিয়ে আমি নিঃস্ব

সামিনা চৌধুরী

(ডুকরে কান্না) কী বলব। কিছুই বলার নেই। একের পর এক আপনজন হারিয়ে আমি নিঃস্ব। আজকে সামিনা চৌধুরী যে কজন মানুষের জন্য হয়েছি, তাদের মধ্যে অন্যতম আলাউদ্দিন চাচা। আমাদের সম্পর্ক ছিল পারিবারিক। লাকী চাচা-হ্যাপী চাচা (লাকী আখন্দ-হ্যাপী আখন্দ) আমাকে শিল্পী হওয়ার আগেই আবিষ্কার করেন। আর শিল্পী হওয়ার পর আমাকে নতুন মাত্রা দেন আলাউদ্দিন চাচা। তার সুর-সংগীতে একটা গানের কথাই মনে পড়ছে, ‘শেষ করোনা শুরুতে খেলা’। উনি এত দ্রুত জীবনের খেলা সাঙ্গ করে চলে যাবেন এটা মানা যায় না।

 

 

উপরে