ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১২:০৯

করোনায় ৫ কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে কওমি মাদ্রাসাগুলো

অনলাইন ডেস্ক
করোনায় ৫ কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে কওমি মাদ্রাসাগুলো

করোনার কারণে সারাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেকটা ভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থারও ক্ষতি হয়েছে। আর এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসার তালিকা করে অন্তত সাড়ে চার হাজার মাদ্রাসায় ৫ কোটি টাকার সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক)।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ জার্নালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বেফাকের সহকারি মহাপরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের। তিনি বলেন, ‘৫ কোটি টাকা আমরা আমাদের তহবিল থেকে সারা দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার মাদ্রাসায় বন্টন করেছি। আমরা রমজান থেকে শুরু করে জিলহজ্জের মধ্যকার এই সময়টাতে উক্ত মাদ্রাসাগুলোতে টাকা পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় মনিটারিং টিম পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছে। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের যেসব সদস্য আছেন, তাদের উপস্থিতিতে প্রতিটা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের অর্থ তুলে দিয়েছি। তারা টাকা পেয়ে তারপরেই আমাদের নির্দিষ্ট ফরমে স্বাক্ষর করেছেন।’

প্রয়োজনে সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন এনে হলেও যথাযথ সময়ে শিক্ষাবর্ষের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করছে বেফাক। এ বিষয়ে মুহাম্মদ যুবায়ের বলেন, আমাদের বছর হিসেব করা হয় আরবি মাস ধরে। রমজান থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বছরের শাওয়াল মাস পর্যন্ত একটি শিক্ষাবর্ষ হিসেব করা হয়। রমজানের মাসের আগে আমরা বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার চেষ্টা করি। সাধারণত রমজানের আগের শাবান মাসে আমরা পরীক্ষা নেই এবং রমজানে ফলাফল প্রকাশ হয়। রমজানে অনেক হাফেজ ছেলে তারাবির নামাজ পড়ায়।

এ বছর আমদের রমজানের আগে পরীক্ষা হয়নি বলে পুরো সিস্টেমে একটা জট পাকিয়ে গেছে। একটা ছেলে হেফজ শেষ করে মাওলানা লাইনে পড়বে তা হয়নি। তারা করোনার কারণে পিছিয়ে পড়ছে। যে কারণে আমরা চাই পরীক্ষাটা হোক। পরীক্ষাটা হলে আমরা নতুন করে শুরু করতে পারবো। এটা নিয়ে আমরা বার বার আলোচনা করায় সরকার আমাদের অনুমতি দিয়েছে।

ক্লাসের অনুমতি দিলেও আমরা বেশ কিছু নীতিমালা মেনে চলছি। যা মানার জন্য আমাদের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষকদেরও নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। তারা বিষয়টি মেনে চলছেন। আমরা সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছি।

নির্দেশনায় কী কী আছে তার বর্ণনা করতে গিয়ে সহকারি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১) মাদ্রাসা ক্যাম্পাস ও মাদ্রাসা ভবনকে জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

২) আগত অভিভাবক ও ছাত্রদের নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৩) প্রয়োজনীয় দূরত্ব রেখে ছাত্রদের বসার ও শোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪) শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৫) দেশ, জাতি ও বিশ্বের জন্য নিয়মিত দোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে উল্লেখ করে সহকারি মহাপরিচালক বলেন, আমরা কিছু সিলেবাস সংশোধনের বিষয়েও ভাবছি। আপাতত আমরা যেসব পরীক্ষা না নিলেই নয় তা নিচ্ছি। বাকি পরীক্ষাগুলো মাদ্রাসায়-ই হবে। সাধারণ শিক্ষায় সেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে আমরাও সে ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা চাচ্ছি না আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ুক।

মুহাম্মদ যুবায়ের বলেন, আপাতত আমরা বোর্ড থেকে শুধুমাত্র হেফজ সমাপনী পরীক্ষা ও কিতাবি সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছি। এই দুটো বাদে অন্যান্য পরীক্ষাগুলো আমরা স্থানীয়ভাবে নিজ নিজ মাদ্রাসায়ই নিবো। প্রজ্ঞাপনে আমাদের যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে তা পরীক্ষা সময়ও মানতে হবে।

‘আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু তারপরেও আমরা যতোটা সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আপাতত শিক্ষার্থীদের বাইরে বের হতে অনুৎসাহিত করছি। তারপরেও তারা যদি বাইরে যায়, মাদ্রাসায় প্রবেশের সময় স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ, হাত পরিষ্কারসহ অন্যান্য কার্যক্রম মেনে চলতে হচ্ছে।’

মুহাম্মদ যুবায়ের বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সিলেবাস শেষ না করতে পারলে আগামী বছরের সাথে চলতি বছরের কিছু সময় যুক্ত করে নেয়ার কথা ভাবছি। এছাড়া আমরা সিলেবাসেও যদি পরিবর্তনও আনা লাগে তা কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে ভাবছি। মুরব্বিরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। মূলত রমজানের মধ্যে আমাদের সিলেবাস শেষ করার একটা তাড়া থাকে। কিন্তু এবার যদি রমজানের মধ্য সিলেবাস শেষ করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে। আমরা এখনো কিছু নির্ধারণ করিনি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বেফাক বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড নামেও পরিচিত। এটি ছাড়াও বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা সমূহের ছোট বড় আরো প্রায় আঠারোটি শিক্ষা বোর্ড আছে। বেফাকুল মাদারিস তাদের নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, উন্নয়ন, বিভিন্ন স্তরভেদে পরীক্ষা গ্রহণ এবং সনদ প্রদানের কাজ করে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের রিপোর্ট অনুযায়ী বেফাকের অধীনে বিশ হাজারেরও বেশি কওমি মাদরাসা রয়েছে।

 

উপরে