অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসূ করতে দরকার সহজলভ্য প্রযুক্তি
করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মে মাসে ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ পরিচালনা করে। তখন জানায়, ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্ট ফোন রয়েছে।
কিন্তু যাদের স্মার্টফোন নেই কিংবা থাকলেও নেটওয়ার্কের দুর্বলতা বা ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করার মতো অবস্থায় নেই— তাদের কী হবে? বিষয়টি আমলে নেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষা সংশিষ্টজনেরা। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথাও বলছেন শিক্ষামন্ত্রী।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানা সুলতানা বিবিসিকে জানান, “আমার স্মার্টফোন আছে, কিন্তু পুরো এলাকায় ভালো নেটওয়ার্ক নেই। সবসময় টু'জি স্পিড। তাছাড়া আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ইন্টারনেটে'র খরচ জোগানোও অসম্ভব। আমাদের ক্লাসে এরকম আরও অনেকে আছে যারা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকে। আমরা তো ক্লাস করতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছি।”
অনেকের অভিযোগ, ক্লাস করতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছেন। এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও আগে অনলাইন ক্লাস চালু করলেও সেখানকার শিক্ষার্থীরাও একই কথা বলছেন।
যেমন; ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মুমু মমতাজ বলেন, “সরাসরি ক্লাসে যেভাবে পড়া বোঝাতেন টিচাররা, এখানে সেভাবে হচ্ছে না। তাছাড়া সিনিয়র টিচার যারা আছেন, তাদের অনেকেরই অনলাইনের প্রযুক্তিতে ঘাটতি আছে। তারাও চেষ্টা করছেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছেই। এছাড়া ঢাকার বাইরে আমাদের যেসব বন্ধুরা আছে, তারাও নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় ভুগছে।”
কারো মতে, ল্যাপটপ না থাকায় তাকে হাজার দুয়েক শব্দের এসাইনমেন্ট মোবাইলেই লিখতে হচ্ছে। যেটা খুবই কষ্টকর।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কাউকে বেশি সুবিধা দেয়া বা কাউকে বঞ্চিত রাখা— এমন উদ্দেশ্য তাদের নেই।
তিনি বলেন, “আমাদের এতোগুলো ছেলে-মেয়ে তাদের কী কী সাপোর্ট লাগবে? কাউকে হয়তো স্মার্টফোন লাগবে, কোথাও হয়তো আর্থিক সাহায্য লাগবে। এগুলো লাগবে। কিন্তু তারপরেও বলছি, এগুলোর ব্যবস্থা করে তারপরে কি অনলাইনে যাবো? নাকি আগেই যাবো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই আমরা শুরু করি। তাহলে কোথায় ঘাটতি আছে, কতটুকু কী লাগবে সেটি বুঝে নিরূপণ করা সহজ হবে।”
ক্লাস শুরু হলেও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হবে না বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তখন পর্যাপ্ত রিভিউ ক্লাস নিয়ে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা হবে।
তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আইটি অবকাঠামো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সরকারের অর্থ সাহায্য লাগবে বলে মত দিচ্ছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানান, কমিশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে নানা রকম দাবি-দাওয়া, পরামর্শ এসেছে। শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ঋণের ব্যবস্থা, ফ্রি ইন্টারনেট এ ধরেণর দাবিগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
এ দিকে অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির এক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। ইতিমধ্যে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।”
“তাই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদান অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিসমূহের সাথে আলোচনা চলছে,” যোগ করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সংকটই আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাই আমাদের হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমে যেতে হতো। করোনা আমাদেরকে এক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং পেশাদারদের মাধ্যমে তৈরি মানসম্মত ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠ প্রদান সময়ের চাহিদা।
শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন তিনি।