তেজগাঁওয়ে বায়িং হাউজ কর্মকর্তা সুলতান হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৭
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বায়িং হাউজ কর্মকর্তা সুলতান হত্যার মূলহোতাসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গুলশান জোনাল টিম।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কাজী মোঃ আকবর আলী (৪৫), ফরহাদ হোসেন, মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে সুমন (৩৫) মোঃ সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২১), মোঃ আমিনুল ইসলাম ওরফে সবুজ (৫০), রুহুল আমিন (৪০) ও মোঃ ইব্রাহীম ওরফে নেতা ইব্রাহীম ওরফে মেম্বার ইব্রাহীম (৩৭)।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত র্যাবের দুইটি জ্যাকেট, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি পিস্তল, ম্যাগজিন সংযুক্ত ০৫ রাউন্ড গুলি, একটি খেলনা পিস্তল ও একটি পিস্তলের কভার উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ গোলাম সাকলায়েন পিপিএম ডিএমপি নিউজকে জানান, ১৩ আগস্ট, ২০২০ শরিয়তপুরের সখিপুর থানার সরকার গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রথমে ফরহাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ আগস্ট, ২০২০ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে সুমনকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্সসহ গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন বেলা ২:১৫ টায় পুরানা পল্টন লাইন এলাকা থেকে বাকী পাচঁজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, দি ফ্যাশন বায়িং হাউজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ সুলতান হোসেন (৪৬) তেজগাঁও থানার নাখালপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় ১৪ জুলাই ২০২০ সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। অফিস শেষে পুনরায় বাসায় ফেরত না আসায় নিহতের ভাই ১৫ জুলাই ২০২০ তেজগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পরের দিন (১৬ জুলাই) মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার হাইওয়ে রাস্তার ঢালে ঝোপের ভিতর একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। ভিকটিম সুলতানের আত্মীয়-স্বজন সংবাদ পেয়ে দ্রুত মানিকগঞ্জ সিংগাইর থানায় গিয়ে লাশটি সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই ১৮ জুলাই তেজগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।
তদন্তে বেরিয়ে আসে এক লোমহর্ষক ঘটনা, ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডিএমপি নিউজকে বলেন, ১৪ জুলাই,২০২০ সুলতান মতিঝিল মানি এক্সচেঞ্জ অফিস হতে ব্যাগ হাতে বের হয়ে পল্টন মোড় থেকে বিআরটিসি বাসে উঠেন। সাগর ও সবুজ বাসে উঠে পাশের সিটে বসে তাকে অনুসরণ করেন। তারা তাদের দলের আকবরকে ফোন করে বলেন বাসটি ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছে। তখন টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সোহেলের মাধ্যমে ভাড়া করা এ্যাম্বুলেন্সসহ আকবর, ড্রাইভার সুমন, ফরহাদ ও মনির উক্ত বাসটি অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসতে থাকেন। বাসটি ফার্মগেট থামলে সুলতান বাস থেকে নেমে মিরপুরগামী শেখর বাসে উঠেন। সাগর ও সবুজ তাকে অনুসরণ করে উক্ত বাসে উঠেন। তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আকবরকে জানান লোকটির কাছে অনেক বিদেশী ডলার আছে, কাজটি করতে হবে। তখন আকবর এ্যাম্বুলেন্সযোগে পূনরায় মিরপুরগামী শেখর বাসটিকে অনুসরণ করতে থাকেন। পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে গিয়ে বাস থামলে সুলতান বাস থেকে নামেন। তিনি বাস থেকে নেমে রাস্তার অপর পাশে গেলে সাথে সাথে আকবর তার দলবলসহ নিজেদেরকে র্যাবের পরিচয় দিয়ে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসেন। ঐ সময় আকবরের হাতে ওয়্যারলেস সেট, মনিরের গায়ে র্যাবের পোশাক, ফরহাদের গায়ে র্যাবের পোশাক এবং হাতে একটি হ্যান্ডকাফ ছিল। যখন এ্যাম্বুলেন্স চলতে থাকে তখন সুলতান বুঝতে পারেন তারা র্যাবের সদস্য না, তখন তিনি চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। তারা সুলতানের হাতে থাকা ব্যাগটি তল্লাশী করেন, কোন ডলার না পেয়ে ডলার কোথায় জিজ্ঞাসা করেন। সুলতান ভয়ে আবারও চিৎকার চেচামেচি করলে দুইদিক থেকে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে জোরে টান দিলে সুলতান মারা যান। এরপর তারা লাশসহ গাড়িটি নিয়ে গাবতলী-হেমায়েতপুর-সাভার হয়ে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ান। গাড়িতে ড্রাইভার ও লাশ রেখে সুকৌশলে সবাই পালিয়ে যান। চালক সুমন একা লাশটিকে নিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদূরে রাস্তার পাশে জঙ্গলে লাশটি ফেলে পালিয়ে যান।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ভুয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পরিচয় দানকারী একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। তারা রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা হুন্ডির ব্যবসা করে, বেশি ডলার ভাঙ্গায় ও ব্যাংক হতে মোটা অংকের টাকার লেনদেন করে এমন লোকদের টার্গেট করে। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে র্যাব পরিচয় দিয়ে গাড়িতে উঠায়। এরপর হাত-পা বেঁধে মারধর করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের কাছে থাকা নগদ অর্থসহ যাবতীয় মালামাল ছিনিয়ে নেয়।
গ্রেফতার প্রত্যেককে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।