ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২০ ১০:১৫

আদেশের ৫ মাস পর রিমান্ড হল পাপিয়ার

অনলাইন ডেস্ক
আদেশের ৫ মাস পর রিমান্ড হল পাপিয়ার

করোনা মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে এক মামলায় আদালত আদেশ দেয়ার ৫ মাস পর যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব।

বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে শুক্রবার পাপিয়া দম্পতিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন রিমান্ড শেষে এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

এর প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর বিচারিক হাকিম মাসুদ-উর-রহমান দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামীসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাব-১।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব সদস্যরা ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে পাপিয়া-মফিজুরের বিলাশ বহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক বই, বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে। এ সময় অবৈধ একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুটি ম্যাগাজিনে ২০ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করেন র‌্যাব সদস্যরা।

এ ব্যাপারে বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় পৃথক তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালত পাপিয়া দম্পতি ছাড়াও তাদের দুই সঙ্গীকে ১৫ দিনের রিমান্ডে দেন। প্রথম দফা রিমান্ডে পাপিয়া দম্পতি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে ছিলেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর বর্তমানে দুটি মামলা তদন্ত করছে র‌্যাব। বাকি একটি মামলার তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এরপরে ১১ মার্চ বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা এই আইনের মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায়ও ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে তাদের রিমান্ডে নেয়া যায়নি বলে জানায় র‌্যাব।

এদিকে ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ৪ আগস্ট পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার দিন অর্থাৎ চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের একটি বিলাসবহুল হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট এবং চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি রুমে অবস্থান করে রুম-নাইট, রেস্টুরেন্ট (খাবার), রেস্টুরেন্ট (মদ), স্পা, লন্ড্রি, মিনিবার ফুড, মিনিবার বাবদ মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টাকার বিল শামীমা নূর পাপিয়া নিজেই ক্যাশে পরিশোধ করেন। তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন পছন্দ করতেন বিধায় ওই বিলাসবহুল হোটেলে থাকাবস্থায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার শপিং করেছেন বলে জানান।

পাপিয়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছর মাসিক ৫০ হাজার টাকা হারে ৩০ লাখ টাকা বাসাভাড়া দিয়েছেন। গাড়ির ব্যবসায় ১ কোটি টাকা এবং নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার ও তার স্বামীর নামে ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকা জমা আছে।

র‌্যাব পাপিয়ার বাসা থেকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। মফিজুর রহমান সুমনের নামে হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের একটি গাড়ি আছে, যার দাম ২২ লাখ টাকা। এভাবে ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকা জ্ঞাতসারে অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জনপূর্বক তা খরচ করে পাপিয়া-সুমন দম্পতি। এসব টাকা অজর্নের পক্ষে কোনো বৈধ উৎস তারা দেখাতে পারেননি।

এসব সম্পদ অর্জনের আয়ের উৎসের সপক্ষে কোনো দালিলিক রেকর্ডপত্রাদি/প্রমাণাদি উপস্থাপন না করায় ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার সম্পদ তাদের জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বলে প্রতীয়মান হওয়ায় এবং জ্ঞাতসারে অপরাধলব্ধ আয়ের দ্বারা অর্জিত ওই পরিমাণ জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ তাদের ভোগদখলে রেখে অভিযুক্ত শামীমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।

 

 

উপরে