শতকোটি টাকার সম্পদ বিদেশে একাধিক ফ্ল্যাট
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে বৈধ আয়ের বাইরে অঢেল সম্পদ গড়ার বিষয়ে ২০১৮ সাল থেকেই দুদক অনুসন্ধান করে আসছে। এখন জানা যাচ্ছে, অনুসন্ধানে প্রদীপ কুমারের দেশ-বিদেশে শতকোটি টাকার সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রদীপ কুমারের জন্য পুলিশের চাকরিটি আলাদিনের চেরাগ হিসেবেই ধরা দিয়েছিল তাঁর কাছে। চাকরির দুই যুগের মধ্যে প্রদীপ মানুষকে ক্রসফায়ারের ভয়, ঘুষ বাণিজ্য, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদক কিংবা এনবিআরের চোখ ফাঁকি দিতে নিজের নামে সম্পদ না রেখে সব করেছেন স্ত্রী চুমকি দাশের নামে। জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণসহ তাঁর সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকার ওপর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ শুধু দেশের ভেতরেই নয়; অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারতেও অর্থপাচারের মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে।
২০১৮ সাল থেকেই প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহাবুব আলম। তাঁর অনুসন্ধানে উঠে আসে চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় নিরীহ মানুষের জমি দখল করে স্ত্রী চুমকির নামে বহুতল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগামের পাঁচলাইশ থানার ওসি থাকাকালে মুরাদপুরে ১০ কাঠা জমি দখল করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকায় চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে একটি ফ্ল্যাট, কক্সবাজারে দুটি হোটেলের মালিকানা, বেয়ালখালীতে স্ত্রী চুমকির নামে গড়েন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। বোয়ালখালীতে স্ত্রীর নামে রয়েছে মৎস্য খামার; ভারতের আগরতলা ও অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক ফ্ল্যাট, রেস্টুরেন্টসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদেরও খোঁজ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধান শুরুর পর মাহাবুব আলম সম্পদ বিবরণীর তথ্য-উপাত্ত চেয়ে নোটিশ দেন প্রদীপ কুমার দাশকে। ওই নোটিশের পর প্রদীপ একটি সম্পদ বিবরণী দাখিলও করেন দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে। বিবরণীতে বলা হয়, স্ত্রী চুমকির (গৃহিণী) নামে বোয়ালখালীতে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য খামার রয়েছে। পাথরঘাটায় চার শতক জমি রয়েছে চুমকির নামে; যার মূল্য ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ওই জমির ছয়তলা ভবনের বর্তমান মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার, পাঁচলাইশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকার জমি কেনা হয়; ২০১৭-১৮ সালে কেনা হয় কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় ৭৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট; যার দাম ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
কিন্তু দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পদ বিবরণীতে ওসি প্রদীপ যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন, সেই সম্পদের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি সম্পদের মালিক তিনি ও তাঁর স্ত্রী। নিজের নামে সামান্য কিছু সম্পদ করলেও বেশির ভাগই করেছেন স্ত্রী চুমকির নামে। শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগই নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচারও করেছেন প্রদীপ। এমনকি বোয়ালখালীতে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় শুরু করা মাছের খামার থেকে তাঁর আয় দেখানো হয়েছে কোটি টাকার বেশি।
অভিযোগ রয়েছে, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ থেকে বাঁচাতে জনপ্রতি ৫-১০ লাখ টাকা আবার কারো কাছ থেকে এরও বেশি টাকা নিয়েছেন প্রদীপ। টেকনাফের অনেক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুট করে নিয়ে আসেন টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে টাকা দিলেও ওসি প্রদীপ টাকা পেয়ে যাওয়ার পর অনেককেই ক্রসফায়ারের নামে খুন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।