কুয়েত কারাগারে পাপুলের ডিটেনশন দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি
মানবপাচার, মানি লন্ডারিং ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে ডিটেনশনে থাকা লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের মুক্তি সহসাই মিলছে না। কুয়েতে তার কারাবাসের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশটির আদালত আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে রাখার নতুন আদেশ জারি করেছে।
কুয়েতের আরবি দৈনিক আল-কাবাস জানায়, কুয়েতের প্রশাসন মানবপাচার মামলা শক্ত ভাবে মোকাবিলা করছে। পাপুলের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিআইডির অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে পাপুলের বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট ও ফলোআপ দেয়া কুয়েতের প্রতিষ্ঠিত আরবি দৈনিক আল-কাবাস তার সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছে, ২৭ জুলাই কুয়েতের আদালতে ওঠেছিল বহুল আলোচিত পাপুল মামলা। তার আইনজীবীরা বরাবরের মতো জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারক তা নামঞ্জুর করে বাংলাদেশি এমপি পাপুল এবং তার অপকর্মের ৩ সহযোগীকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ডিটেনশন অব্যাহত রাখার আদেশ দেন। পাপুলের সহযোগীরা হলেন- মেজর জেনারেল মাজেন আল জাররাহ (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপসারিত কর্মকর্তা) এবং হাসান আবদুল্লাহ আল কাদের ও নাওয়াফ আলী আল সালাহি (দু’জনের বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি)।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আদালতে পাপুলের জামিন চাওয়া হয়েছিল। সে সময় ওই সংসদ সদস্যের নিয়োগ করা আইনজীবী প্যানেলের আরজি ছিল যে কোনো শর্তে জামিন আদায়ের। কিন্তু পাপুল আচমকা রিমান্ডে দেওয়া স্বীকারোক্তির পুরোটাই অস্বীকারের অপকৌশল নিলে আদালত তাকে দুই সপ্তাহ কারাগারে বন্দি রাখার নির্দেশ দেন। সঙ্গে তার অপকর্মের বড় সহযোগী কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপসারণের পর আটক আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল জাররা আল সাবাহ এবং কুয়েতের আরও দুই নাগরিককেও তদন্তের স্বার্থে জেলে বন্দি রাখতে আদেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন কুয়েত সিটির মুশরেক এলাকার বাসা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ আটক করে এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলকে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে তার বিপুল অবৈধ সম্পদ এবং অনৈতিক লেনদেনের প্রমাণ পায়। অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও দালিলিক প্রমাণ হাতে পায় সিআইডি। তার ব্যাংকের হিসেব জব্দ করা হয়। তার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রিমান্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। এ পর্যন্ত ৩ দফা তার কারাবাসের মেয়াদ বাড়ল।
এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, কুয়েতের বিচার ও শাস্তির ওপর নির্ভর করছে সংসদ সদস্য পাপুলের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতের বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকুক বা না থাকুক কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফেরত পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে পাপুলের অবর্তমানে প্রচলিত আইনেই দেশে চলমান থাকবে মামলা। কুয়েতে পাপুলের গ্রেফতার এবং তার স্ত্রী মহিলা এমপি সেলিনা ইসলাম দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ পাপুলের কর্মকান্ডে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। কুয়েতের স্থানীয় আদালতে পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ও শাস্তি হলে তার সংসদ সদস্য বাতিল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
উল্লেখ, কুয়েতের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম জানায়, ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিকে নিয়ে এক হাজার ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের এক সংসদ সদস্য পাপুলসহ তিনজনের একটি চক্র। এরপরই কুয়েত পুলিশের হাতে পাপুল ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার এবং রেসিডেন্ট পারমিট বিক্রির অভিযোগে কুয়েত আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। দেশটির আইন অনুযায়ী মুদ্রা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাপুলের সাজা হবে ৭ বছর। সেই সাথে মানবপাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর যৌনকর্মী পাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।