ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২০ ১২:২২

মিথ্যা পরিচয়ে কল করা, বেতন লাখ টাকা!

অনলাইন ডেস্ক
মিথ্যা পরিচয়ে কল করা, বেতন লাখ টাকা!

ভূয়া কাস্টমস কর্মকর্তা রাহাত আরা খানম। প্রতারণার জাল ফেলতে ফেলতে একদিন নিজেই আটকে গেলেন রাহাত। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেও প্রতারণাই যার পেশা। কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। হঠাৎ ফোন করেন টার্গেট করা ব্যাক্তির মোবাইলে। হ্যালো, কাস্টমস কর্মকর্তা ফারজানা মহিউদ্দিন বলছি। বিদেশ থেকে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। এভাবেই শুরু হয় তার প্রতারণার সূচনা।

অবশেষে ওই প্রতারক ভূয়া কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, পার্সেলটি জন্য ‘কাস্টমস ফি’ লাগবে। আবার বলেন, ‘পার্সেলে অবৈধ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। এগুলো বৈধ করার জন্য ফি দিতে হবে, নইলে মানি লন্ডারিং আইনে মামলায় পড়বেন।’ পরে টার্গেট ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে সে। এভাবে ফোন করে মিথ্যা বলাই যেন তার চাকরি। কারণ তাকে এ কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছে প্রতারক চক্র। তাতে তার মাসিক বেতন দুই লাখ টাকা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে প্রতারণা চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। অবশ্য বাস্তবে তিনি কাস্টমস কর্মকর্তা নন, আর যাকে কল দেওয়া হয়েছে তার নামেও কোনো পার্সেল আসেনি। আসলে মিথ্যা পরিচয়ে লোকজনকে কল দেওয়াই ছিল তার চাকরি। এজন্য বেতন হিসেবে তিনি পেতেন প্রতারণার অর্থের পাঁচ শতাংশ। এমন লোভনীয় চাকরি বেশি দিন করতে পারেননি ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন। ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে প্রতারণায় জড়িত নাইজেরীয় চক্রের সহযোগী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, দেড় বছর আগে রাহাত আরা খানমকে নিয়োগ দেয় বিদেশি এ প্রতারক চক্র।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই মাসে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। রাজধানীর পল্লবীতে তাদের অফিস রয়েছে। সেখানেই কাজ করতেন উচ্চশিক্ষিত এই তরুণী। সিআইডির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন আটক রাহাত আরা খানম। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। অল্প কথায় ভালো পরিবারের মেয়ে তিনি। টাকা আয়ের লোভে তিনি জেনেশুনেই এমন কাজ চালিয়ে গেছেন বলে ধারণা অভিযান সংশ্লিষ্টদের। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে ১০ জনকে উপহারের ফাঁদে ফেলার টার্গেট নিয়ে কাজ করত নাইজেরীয় চক্রটি। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে একপর্যায়ে মূল্যবান উপহারসামগ্রী পাঠানোর কথা জানাত চক্রটি। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করতেন রাহাত আরা খানম। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অন্তত দুই লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করত তারা। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে রাজধানীর পল্লবী থেকে প্রতারক চক্রের নাইজেরিয়ান ১২ সদস্য ও তাদের সহযোগী রাহাত আরাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, ১৪টি মোবাইল ফোন ও বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই ভুক্তভোগী তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা খুইয়েছিলেন।

উপরে