ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ৯ জুলাই, ২০২০ ১০:৩৬

এনু-রূপনের ১২৮ ফ্ল্যাট ও ৫১ কোটি টাকার খোঁজ পেয়েছে সিআইডি

অনলাইন ডেস্ক
এনু-রূপনের ১২৮ ফ্ল্যাট ও ৫১ কোটি টাকার খোঁজ পেয়েছে সিআইডি

বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়ার ১২৮টি ফ্ল্যাট ও ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকার খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এনু-রূপনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অর্থ পাচারের পাঁচটি মামলার মধ্যে চারটির তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের এসব মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।

জানা গেছে, অর্থ পাচারের আরেকটি মামলায় এনু-রূপনকে রিমান্ডে আনা প্রয়োজন। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুতই এ মামলার কার্যক্রম শেষ করা হবে। এনু-রূপনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের পদ কেনার অভিযোগ রয়েছে। এনু গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন, আর রূপন ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। এনু-রূপন গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।

সিআইডির অতিরিক্ত এসপি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তে পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এনু-রূপনের নামে ১২৮টি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। দুই ভাইয়ের বাসায় ৩২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আর দুই ভাইয়ের নামে ব্যাংকে পাওয়া গেছে ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন  এই সহোদর। এনু-রূপনের  বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করবে।’ সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, পুরান ঢাকার ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের। পুরান ঢাকার ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ১০টি ফ্ল্যাট, ১১৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিট ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১২ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট এবং ১০৩ ও ১২০ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে দুই কাঠা প্লটের মালিক এনু-রূপন। ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈশুন্ডি এলাকায় ১৪টি ফ্ল্যাট, গেন্ডারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনে ১৭টি ফ্ল্যাট, ৭১ নম্বর শাহ সাহেব লেনে চারটি ফ্ল্যাট, ৮ নম্বর শাহ সাহেব লেনে ১৩টি ফ্ল্যাট, এক নম্বর নারিন্দা লেনে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে চারটি ফ্ল্যাট, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনে ১১টি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে দুটি ফ্ল্যাট এবং ৬ নম্বর গুরুদাস সরদার লেনে ১২টি ফ্ল্যাটের মালিক এনু-রূপন। ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনের টিনশেড ভবন, ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারি রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি, ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি ভজহরি শাহ স্ট্রিটে চার কাঠার প্লট, ৮৮ নম্বর মুরগীটোলায় ৯ কাঠা, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ১০ কাঠার প্লট, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ১২ কাঠা, পালং থানায় ২০ শতক এবং নড়িয়ায় ১৪ শতক জমির মালিক দুই ভাই। এনু-রূপনের কাছ থেকে নগদ ৩২ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানা যায়। তবে সিআইডি তদন্ত করে দেখেছে, বাসায় নগদ টাকা ও সোনা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখেন দুই ভাই। সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী, এনু-রূপনের ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা এখন জব্দ রয়েছে। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর এনু-রূপনের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে ৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রূপনের পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজপত্র পাওয়া যায়। সোনা পাওয়া যায় ১ কেজি। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) এনু-রূপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আর রূপনের বিরুদ্ধে আনা হয় ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। ক্যাসিনো কারবারি এনু-রূপনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এখনো আদালতে কোনো প্রতিবেদন দেয়নি দুদক।

 

উপরে