৮৫ দিন পর মিলল সেই পাঁচজনের পরিচয়
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার খাকচকে ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ৮৫ দিন পর পরিচয় শনাক্ত করেছে রেলওয়ে পুলিশ। সেই সঙ্গে মৃত্যুর রহস্যও উদঘাটন করা হয়েছে। পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গতকাল শুক্রবার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ।
গত ৮ জুলাই সকালে উপজেলার খাকচক এলাকার ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে ৫ জনের ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে তিনজনের মাথা আলাদা এবং দুজনের শরীর দ্বিখণ্ডিত ছিল। রেলওয়ে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। নিহতদের আঙুলের ছাপ নিয়েও পরিচয় উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
ধারণা করা হয়েছিল, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না। তাই বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফনের আগে ফরেনসিক ও ডিএনের জন্য মুখের লালা ও দাঁত সংগ্রহ করা হয়েছিল।
খবরের কাগজের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
একসঙ্গে পাঁচজনের ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা সেই সময়ে রহস্যের জন্ম দেয়।
অনুসন্ধানে নামে রেলওয়ে পুলিশ। ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের স্টেশন ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন। অবশেষে পরিচয়সহ মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে।
পুলিশ জানায়, নিহতরা হলো- সিলেট শাহজালাল মাজার এলাকার সাব্বির (১৬), হবিগঞ্জের মাধবপুরের আরিফ মিয়ার ছেলে রাব্বি (১৫), মৌলভীবাজারে কুলাউড়া স্টেশন এলাকার সিয়াম (১৪), ময়মনসিংহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল আমিন ও সেলিম (২৫)। তারা সবাই ‘টোকাই’ ছিল। তাদের মধ্যে সেলিমের গ্রামের বাড়ি কোথায় জানা যায়নি। তাদের সবাই ভাসমান অবস্থায় স্টেশন ও রাজধানীর বস্তিতে বসবাস করত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ জানান, গত ৮ জুলাই রাত পৌনে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্টেশন থেকে ঢাকাগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেসের দ্বিতীয় বগির ছাদে ওঠে সাব্বির, রাব্বি, সিয়াম, আল আমিন ও সেলিম। একই ট্রেনের তৃতীয় বগির ছাদে ছিল আরিফুল। ট্রেন ছাড়ার পর ওই পাঁচজনকে ছাদে বসে মাদক নিতে দেখে সে। আরিফুলের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রায়পুরার মেথিকান্দা স্টেশন অতিক্রম করার সময় সেলিমকে ছাদ থেকে পড়ে যেতে দেখে রাব্বি। পরে চারজন মিলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে সবার মৃত্যু হয়। ওই দিন ভোর ৫টায় কমলাপুর স্টেশনে নেমে বাসে করে খিলগাঁও এলাকা গিয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়ে আরিফুল। ঘুম ভাঙলে সে পুরো ঘটনা ইসলাইল ও বিল্লাল নামে অন্য দুই ছিন্নমূলকে জানায়। এদিকে পুলিশ স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে তথ্য সংগ্রহের সময় আরিফুলের খোঁজ পায়।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পারে রেলওয়ে পুলিশ। এদিকে নিহত ৫ জনের পরনের কাপড় ও ছবি দেখে আরিফুল, রিফাত, বিল্লালের মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি মো. আলীম হোসেন শিকদার বলেন, নিহতদের চারজন টোকাই ও একজন ভিক্ষাবৃত্তি করত। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঢাকাগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে একসঙ্গে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছিল।