গৌরনদী হানাদার মুক্ত দিবস আজ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও বরিশালের গৌরনদী হানাদার মুক্ত হয়েছিলো ৮দিন পর ২২ ডিসেম্বর। টানা ৮ দিন মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যৌথ আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে ২২ ডিসেম্বর গৌরনদী কলেজে অবস্থানরত শতাধিক পাক সেনা মিত্র বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সেখানে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযোদ্ধারা ওই স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাক সেনারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রবেশের খবরে গৌরনদীর মুক্তিকামী মানুষ কটকস্থল (সাউদের খালপাড়) এলাকায় বটগাছের পেছনের অংশে ব্যাংকার খনন করে তার মধ্যে অবস্থান নেয়। হানাদাররা সেখানে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে। ওইদিন পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের সৈয়দ আবুল হাসেম, চাঁদশী গ্রামের পরিমল মন্ডল, বাটাজোর গ্রামের মোক্তার হোসেন, গৈলা গ্রামের আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্স। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতেও ৮ জন পাক সেনা নিহত হয়। এটাই ছিলো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে পাক সেনাদের সাথে মুক্তি বাহিনীর স্থলপথে প্রথম যুদ্ধ।
গৌরনদীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম বেপারী জানান, ২৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৮ জন পাকসেনা নিহত হওয়ার পর তারা এলোপাথাড়ি গুলি করে দুই শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ সময় হানাদাররা গৌরনদী বন্দরসহ পাশ্ববর্তী এলাকার শত শত ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। মে মাসের প্রথম দিকে পাক বাহিনী গৌরনদী কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পে ছিল আড়াই শতাধিক পাক সেনা ও স্থানীয় অর্ধশত রাজাকার-আলবদর। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও পাক সেনারা গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থান করছিল। কলেজের পশ্চিম দিক থেকে মুজিব বাহিনী এবং পূর্বদিক থেকে নিজাম বাহিনী আক্রমণ করে। ৮ দিন যুদ্ধের পর পাক সেনারা পরাস্ত হয়। ২২ ডিসেম্বর গৌরনদী কলেজে অবস্থানরত পাক সেনারা মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপরপরই গৌরনদী পাক বাহিনী মুক্ত হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম মিঞা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সাউদের খালপাড়ে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। তিনি সাউদের খালপাড় এবং গৌরনদী কলেজে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে অচিরেই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।