পুলিশকে এক চোর শনাক্তে ঘাঁটতে হল ১৫ হাজার কললিস্ট!
বরিশালে ৮ মাসে আগে দিন-দুপুরে সংঘটিত একটি জুয়েলারি চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বরিশালে প্রায় ১৫ হাজার ফোন নম্বর যাচাই-বাছাই করে জুয়েলারি দোকানের এক স্বর্ণালংকার চোরকে গ্রেফতারের পর একে একে বেরিয়ে এলো পুরো চোরচক্র। জুয়েলারি দোকানে চুরি সংঘঠিত হওয়ার দিন আশপাশের মোবাইল ফোনের টাওয়ারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আসা-যাওয়া কলের তালিকা যাচাই-বাছাই করে এক চোরকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চক্রের অন্যান্যদেরও আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, জুয়েলারির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় টানা ৯ দিন অভিযান চালিয়ে ওই চুরির সাথে জড়িত ৮ জন এবং চোরাই স্বর্ণালংকার কেনার অভিযোগে ২ জন জুয়েলারি মালিককে গ্রেফতার করে তারা। এ সময় চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ।
এতে জুয়েলারি মালিক খুশি হলেও এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে না পাড়ায় এখনও উদ্বিগ্ন অন্যান্য জুয়েলারি মালিকের। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। গত ১৯ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম কাঠপট্টি এলাকায় একটি জুয়েলারী বন্ধ করে দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যান মালিক বাচ্চু মিয়া। তাকে অনুসরন করে সংঘবদ্ধ চক্র ব্যস্ততম রাস্তার পাশে লুঙ্গি এবং বিছানার চাদর মেলে ধরে শাটার ও কলাপসিবল গেটের তালা কেটে ভেতরে ঢুকে মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ১২৬ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওই দিনই জুয়েলারী মালিক অজ্ঞাতদের আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে ওই জুয়েলারির সামনে এবং ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে। তবে এদের মধ্যে একজন ছাড়া অন্যান্যরা বরিশালের বাইরের বাসিন্দা হওয়ায় তাদের গ্রেফতারে তেমন অগ্রগতি হচ্ছিল না। এ অবস্থায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. লিটন নামে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২টি স্বর্ণের আংটি উদ্ধার করে তারা।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে এই চক্রের আরও ৭ সদস্য যথাক্রমে সুমন, অলি, জামাল, আলাউদ্দিন, হাসান, নয়ন ও জসিম ওরফে জনি এবং চোরাই স্বর্ণালংকার কেনার অভিযোগে চট্টগ্রামের বউ বাজার এলাকার স্বর্ণা জুয়েলার্সের মালিক পবন রায় ও শিফা জুয়েলার্সের মালিক আলম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আরও ৯টি আংটি এবং একটি নেকলেস।
মেট্রোপলিটনের কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার মো. রাসেল জানান, এই চুরির রহস্য উদ্ধার একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চুরির রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
চুরির ৮ মাস পর আংশিক চোরাই মাল উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করায় খুশী জুয়েলারী মালিক মো. বাচ্চু মিয়া। তবে চুরি যাওয়া পুরো স্বর্ণালংকার উদ্ধার সহ এই চক্রের অন্যান্য সদস্যেদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
চোর চক্র এতটাই দুর্ধর্ষ যে ওইদিন চুরির সময় মাত্র দেড় হাত দূরে পাশের জুয়েলারি মালিকও টের পায়নি পাশের জুয়েলারিতে চুরির ঘটনা। এই চক্রকে সমূলে গ্রেফতার করতে না পাড়লে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারবেন না বলে জানান কাঠপট্টির জুয়েলার্সের মালিক অমল কর্মকার।
দেরীতে হলেও জুয়েলারি চুরির রহস্য উদঘাটন এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করায় তদন্ত কর্মকর্তাদের বাহবা দিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। রবিবার বেলা ১২টায় পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই চুরির রহস্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে সিটি ক্যামেরার ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। নগরীকে নিরাপদ রাখতে বেশি বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন পুলিশ কমিশনার।