বাউফলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
বাউফলের সাবপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেবল বেতন ছাড়া অন্যান্য ফি না নেয়ার জন্য সরকারের নির্দেশ থাকলেও বগা ইউনিয়নের সাবপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেতনের সাথে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বেতন যথাক্রমে ৬০, ৭০, ১০০ ও ১৫০ টাকা হলেও সেখানে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, আইসিটি ও বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল বাবদ মোট ১০৪০ টাকা, ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৩৮০ টাকা, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৮০০ টাকা, নবম ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষার নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যেক বিষয়ে ২০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতা ও প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীরা ফটোকপির দোকান থেকে কিনে নিয়েছেন। যারা বেতনসহ অন্যান্য ফি দিতে পারেননি তাদের অ্যাসাইনমেন্টের খাতা জমা নেয়া হয়নি। মঙ্গলবারের মধ্যে (১৫ ডিসেম্বরের) বেতনসহ অন্যান্য ফি জমা না দিলে তাদেরকে উপরের ক্লাসে উন্নীত করা হবে না।
অপর একটি সূত্র জানায়, এক বছরের বিদ্যুৎ বিল বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ২০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া আইসিটির ক্লাসের নামেও মাসিক ২০ টাকা করে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে ওই বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তি পান এমন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক সরেজমিন সাবপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখতে পান অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্টের খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের বেতনের বাইরে অন্যান্য ফি দিতে অস্বীকৃতি করায় তাদের অ্যাসাইনমেন্টের খাতা জমা নেয়া হয়নি। আর যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে তারও কোন রশিদ দেয়া হয়নি।
আবুবকর নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা অভিযোগ করেন, সাবপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাববকরা নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ দিনমজুরী করে। আবার কেউ কেউ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ি চালায়। তাদের পক্ষে অতিরিক্ত অর্থ দেয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া করোনাকালীন আয় বানিজ্য কমে গেছে।
এ ব্যাপারে সাবপুরা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমানের বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন আদায় করা হচ্ছে। এক সাথে ১২ মাসের টাকা নেয়ায় অর্থের পরিমান বেশী হয়েছে। আইসিটি ক্লাসের জন্য ২০ টাকা ও বিদ্যুৎ বিলের জন্য ২০ টাকা করে নেয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন।
বিদ্যুৎ বিলের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের তিনটি মিটারের মাসে ৪-৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। বিদ্যালয়ে বিশেষ কোন ফান্ড না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে ৫০ জন গরীব ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়নি বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ইয়াছিন এবিএম শাহজাদা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু অর্থ নেয়া হয়েছে। তা এমন কোন দোষের নয়।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।