রেমিট্যান্সে শীর্ষে ঢাকা,পিছিয়ে রংপুর
ব্যাংক খাতে আমানত, ঋণ বিতরণের মতো প্রবাসী আয়েও শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা বিভাগ। অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট থাকলেও এই খাতেও পিছিয়ে থাকছে রংপুর বিভাগ। এক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে ১১৩ কোটি ডলার। বিপরীতে রংপুর বিভাগে এসে ৪ কোটি ডলারেরও কম। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগই এসেছে দুই বিভাগে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন উত্তরাঞ্চলে এমনিতেই স্বল্প আয়ের জনসংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। এজন্য তারা এই টাকা খরচ করে বিদেশে সেভাবে যেতে পারে না। তা ছাড়া এ অঞ্চলের জনশক্তির দক্ষতার ঘাটতিও অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত অক্টোবর মাসে মোট ২৪০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ১১৩ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ১১২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে ঢাকা বিভাগে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এই সময়ে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায় ৭৫ কোটি ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে রাজবাড়ী জেলায় ১ কোটি ডলার।
বিপরীতে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পেছনে রয়েছে রংপুর বিভাগ। চলতি বছরে অক্টোবরে রংপুর বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে রংপুর বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে রংপুর বিভাগে প্রবাসী আয় কমেছে ৫৯ লাখ ডলার। এই সময়ে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে রংপুর জেলায় ১ কোটি ৩ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে লালমনিরহাট জেলায় ১৯ লাখ ডলার।
উত্তরাঞ্চলে প্রবাসী আয় কম হওয়ার অর্থনৈতিক কারণ কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে এক ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়েছে। বিবিএস এর তথ্য হিসাবে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা গড়ে প্রতি জনকে খরচ করতে হয়। আমাদের অভিবাসন ব্যয় এমন একটা পর্যায়ে গেছে এটাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতিও আছে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এখন উত্তরাঞ্চলে এমনিতেই স্বল্প আয়ের জনসংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। এজন্য তারা এই টাকা খরচ করে বিদেশে সেভাবে যেতে পারে না। এটা একটা বড় কারণ। আরও একটা বিষয়, দক্ষতার দিক থেকেও ওই অঞ্চলের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে অনগ্রসর। তবে সব থেকে বড় কারণ তাদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
প্রতিবেদন বলছে, প্রবাসী আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চলতি বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ৬৯ কোটি ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ৬৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে চট্টগ্রাম জেলায় ২০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে বান্দরবান জেলায় ১৬ লাখ ডলার।তথ্যানুযায়ী, প্রবাসী আয় আসার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। চলতি বছরের অক্টোবরে সিলেট বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ২১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে সিলেট বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে সিলেট বিভাগে প্রবাসী আয় কমেছে ৪১ লাখ ডলার। এই সময়ে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে সিলেট জেলায় ১১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে সোনামগঞ্জ জেলায় ২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
এরপর প্রবাসী আয় আসার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। চলতি বছরের অক্টোবরে খুলনা বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে খুলনা বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ১২ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে খুলনা বিভাগে প্রবাসী আয় কমেছে ৮১ লাখ ডলার। এই সময়ে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে যশোর জেলায় ১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে নড়াইল জেলায় ৬৫ লাখ ডলার।
তথ্যানুযায়ী, প্রবাসী আয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। চলতি বছরের অক্টোবরে রাজশাহী বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে রাজশাহী বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে রাজশাহী বিভাগে প্রবাসী আয় কমেছে ১ কোটি ৭ লাখ ডলার। এই সময়ে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে বগুড়া জেলায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে জয়পুরহাট জেলায় ৩৬ লাখ ডলার।
এ ছাড়া চলতি বছরের অক্টোবরে বরিশাল বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। আর এর আগে সেপ্টেম্বরে বরিশাল বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক মাসে বরিশালে প্রবাসী আয় কমেছে ৫৫ লাখ ডলার। এই সময়ে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে বরিশাল জেলায় ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম এসেছে ঝালকাঠি জেলায় ৫৯ লাখ ডলার।