১২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে বিপিসি
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) অবশেষে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তেল আমদানি করছে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশনের (আইএমও) নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং সমুদ্রদূষণরোধে চলাচলকারী জাহাজে ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ তেল সরবরাহের জন্য বিপিসি চলতি মাসে ১৫ হাজার টন আমদানি করবে। আর আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির জন্য প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি সংস্থাটি।
এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলে চলতি বছর বড় পরিসরের তেল সরবরাহ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিপিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সূত্রমতে, দেশের জলীয় সীমানায় চলাচলকারী দেশি ও বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ তেল সরবরাহের জন্য প্রায় ১২ লাখ টন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি সংস্থা বিপিসি। এর মধ্যে রয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টন গ্যাসলিন, এক লাখ ২০ হাজার টন জেট অয়েল, ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল, ৪৫ হাজার টন মোগ্যাস-৯৫ রোন এবং ৮০ হাজার টন মেরিন অয়েল। এজন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করছে যাচ্ছে বিপিসি। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দরপত্র বিক্রি ও সংগ্রহের শেষ দিন।
দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলে চলতি বছরে এ তেল দেশি ও বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে সরবরাহ করা হবে। এতে সমুদ্রদূষণ কমবে। যদিও আইএমও ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ তেল ব্যবহারের জন্য ছয় বছর আগে সদস্য দেশগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। সেই নিদের্শনা বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে জাহাজে জ্বালানি তেল সরবরাহে ‘বাংকারিং নীতিমালা, ২০১৪’ প্রণয়ন করে, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিপিসিকে। প্রায় ছয় বছর পর নীতিমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় বিপিসি। এর অংশ হিসেবে চলতি মাসে ১৫ হাজার টন আমদানিকৃত তেল আসবে, যা দেশের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযূষ দত্ত বলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আইএমও’র জাহাজের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। আমাদের জাহাজগুলোয় এ জ্বালানি ব্যবহার করছি। আমাদের জাহাজ তো দেশে কম আসে। সিঙ্গাপুর, পানামা এসব দেশ থেকে বাংকারিং সুবিধা নেওয়া হয়, ফলে আমাদের দেশ থেকে সংগ্রহের প্রয়োজন পড়ে না। আর এখনও দেশে এ ধরনের তেল সরবরাহ শুরু হয়নি। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে আসার সময় জাহাজগুলোকে বাড়তি তেল নিয়ে আসতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, আইএমও’র নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী জাহাজগুলোকে ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারের তেল ব্যবহার করতে হবে। এ জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমাদের বন্দরের বাংকারিং সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ তেল সরবরাহ করার জন্য প্রথমে ১৫ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করছি, যা চলতি মাসে আসবে। আসলে আগত জাহাজগুলোর কী পরিমাণ তেলের চাহিদা হবে, তা বলা যাচ্ছে না। তাই প্রথমে ১৫ হাজার টন আমদানি করছি। এরপর পরিস্থিতি বুঝে কমানো কিংবা বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জলসীমানায় চলাচলকারী দেশি ও বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজের জন্য প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানির প্রাথমিক প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি। এটি ক্রয় কমিটিতে যাবে, কমিটি অনুমোদন দিলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল তিন হাজার ৭৯৪টি, যা আগের অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৬৯৯টি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৬৬৪টি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৯২টি। সূত্র: শেয়ারবিজ